মুরগিতে স্বস্তি, গরম সবজির বাজার

১ সপ্তাহে আগে
সপ্তাহ ব্যবধানে আরও তেতে উঠেছে রাজধানীর সবজির বাজার। তবে দাম কমেছে খাসির মাংস ও সব ধরনের মুরগির। আর স্থিতিশীল রয়েঝে মাছের দাম।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও হাতিরপুল কাঁচা বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

 

শীত মৌসুমে দাম কিছুটা কম থাকার পর রমজানে সবজির দাম চলে এসেছিল সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। তবে ঈদের পর থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে শাক-সবজির দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে কোনো কোনো সবজিতে দাম বেড়েছে ৫-১৫ টাকা পর্যন্ত।

 

আরও পড়ুন: সবজি-পেঁয়াজের বাজার চড়া, কমেছে মুরগির দাম

 

বিক্রেতাদের দাবি, শীতকালীন সবজির আনাগোনা শেষ হয়েছে। বাজারে আসতে শুরু করেছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। এ সময় এমনিতেই সবজির দাম একটু চড়া থাকে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন,

বাজারে এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রীষ্মকালীন সবজি আসেনি। আর এসব সবজির উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরুর দিকে দাম বিছুটা চড়া থাকে। ধীরে ধীরে কম আসবে।

 

ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর রাজধানীর কারওয়ান বাজার। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

আরেক সবজি ব্যবসায়ী তরিকুল বলেন, এবার শীত মৌসুমে কৃষক লোকসানে ছিল। সবজির দাম পায়নি তেমন। ফলে তারা গ্রীষ্মকালীন সবজিতে কিছুটা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। তাছাড়া এসময় এমনিতেও সবজির দাম কিছুটা বেশি থাকে।

 

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি করলা ৬০-৭০ টাকা, বেগুন ৫০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা ও টমেটো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, পটোল ৫০-৬০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০-১২০ টাকা ও ধনেপাতা ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি পিস চালকুমড়া ৫০ টাকা ও লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা।

 

দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে যা কেনাবেচা হচ্ছে ৭০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েকদিনে বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টির কারণে বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম।

 

দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

ক্রেতারা বলছেন, রমজানে সবজির দাম কম থাকলেও, ঈদের পর থেকেই শাক-সবজির বাজার চড়া। দাম কমাতে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে ফের অস্থির হয়ে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার। আদিলুর নামে এক ক্রেতা বলেন,

রমজানে হাতের নাগালে ছিল সবজির দাম। এখন হঠাৎ করেই বাড়ছে। বাজারে দ্রুত মনিটরিং জোরদার করতে হবে। না বাজারে নতুন করে সিন্ডিকেট তৈরি হবে।

 

তবে রমজানজুড়ে ভোগানো লেবুর দাম কমে এসেছে। মান ও আকারভেদে প্রতি ডজন নেমে এসেছে ৩০-৫০ টাকায়। বিক্রেতার বলছেন, রমজানে যেখানে লেবুর হালি বিক্রি হয়েছে ৮০-১০০ টাকায়, সেখানে এখন দাম কমে ডজনই বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।

 

এদিকে পহেলা বৈশাখ থেকে চড়েছে পেঁয়াজের বাজার। বর্তমানে দামে বেড়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

আরও পড়ুন: হঠাৎ পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা, নেপথ্যে কী?

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা আলমগীর বলেন, ‘খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।’

 

তবে বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে আলুর দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর জন্য গুনতে হচ্ছে ২০-২২ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আর প্রতিকেজি আমদানি করা রসুনের জন্য ১৮০ থেকে ২২০ ও দেশি রসুনে গুনতে হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা।

 

বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে মাছের দাম। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাছ বিক্রি করছেন একজন ব্যবসায়ী । ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা ও শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

আর বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২,৫০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত।

 

এদিকে, গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারে কমেছে সব ধরনের মুরগির দাম। কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৫০ টাকায়।

 

কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

এছাড়া দেশি মুরগি ৬৫০-৬৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়।

 

আরও পড়ুন: আরও কমেছে মুরগির দাম, অস্বস্তি বাড়ছে সবজিতে

 

বাজারে কমেছে খাসির মাংসের দামও। তবে স্থিতিশীল রয়েছে গরুর মাংসের দাম। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ৫০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। আর ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

 

প্রতি কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকায়। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে কমে গেছে বেচাকেনা। এতে কমছে দাম। মাংস ব্যবসায়ী খালিদ বলেন,

গরমে মানুষ মাংস কম কিনছেন। এছাড়া খামার পর্যায়েও দাম পড়ে গেছে। ফলে খুচরা পর্যায়েও দাম কমে এসেছে।

 

তবে কিছুটা বেড়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০-১৩০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন