সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সিগঞ্জ শহরের লঞ্চঘাট হাটলক্ষীগঞ্জে প্রধান সড়কে ময়লার স্তূপ। আর শহরের বাজার সংলগ্ন এবং স্মৃতিস্তম্ভ সংলগ্ন প্রধান সড়কেও ময়লার বড় বড় স্তূপ। ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে এমন নোংরা পরিবেশে বিরক্ত পৌরবাসী।
জানা যায়, দেওভোগ মাদ্রাসা, এভিজেএম, মানিকপুর হাসপাতাল, শ্রীপল্লী, পাসপোর্ট অফিস সংলগ্ন খালইস্ট ও অটোরিকশা স্ট্যান্ট সংলগ্ন খালইস্ট, দক্ষিণ ইসলাম, ইদ্রাকপুর, গোয়ালপাড়া, জেলখানা রোড, কাটাখালি বাজার, রনছ সরকার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায়ও আশপাশের এলাকা থেকে ভ্যানে করে ময়লা এনে জড়ো করা হয়। এতে দুর্গন্ধে আশপাশ দিয়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। এসব ময়লা ৬টি ট্রাক ও ১৯টি ভ্যানে করে নিয়ে ফেলা হয় পৌরভবন থেকে প্রায় ৩ সাড়ে কিলোমিটার দূরের মুন্সিরহাট এলাকায়। আর ড্রেনের তরল ময়লা সরাসরি যাচ্ছে ধলেশ্বরী নদীতে। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতায় প্রায় ৮০ কর্মী নিয়োজিত। এর ৫৮ জনই রাতে রাস্তা ঝাড়ু দেন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এরপরও হিমশিম অবস্থা।
শিক্ষক এম আর জুয়েল বলেন,
পোরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থাই ত্রুটিপূর্ণ। আর ড্রেনের শেষ গন্তব্য ধলেশ্বরী নদী। ড্রেনের সব ময়ল এসে পড়েছে ধলেশ্বরী নদীতে। এগুলো দেখার কেউ নেই। এতে নানা রকম তরল বর্জ্য পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি নদী দূষণ করে চলছে। আর পৌরসভার ড্রেন ছাড়াও বিভিন্ন কলকারখানার কেমিকেলযুক্ত বর্জের কারণে নদীর পানি নষ্টসহ অনেক জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ভারতের বিষাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে বাংলাদেশের পরিবেশ!
পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের রমজানবেগ এলাকার বাসিন্দা আফজাল বলেন, মুন্সিরহাট বাসা থেকে শহরের যেকোনো জায়গায় যেতে হলে এই ময়লার পাশ দিয়ে যেতে হয়। এই ময়লা আবর্জনা দুর্গন্ধ পার হওয়া যায় না। নাক চেপেও দুর্গন্ধ এড়ানো যায় না। এছাড়াও ময়লা আবর্জনা পোড়ানোর ধোঁয়া চোখে নাকে মুখে লাগে। পুরো এলাকায়ই বিষাক্ত অবস্থা।
উত্তর চরমশুর এলাকার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, দিনের পর দিন রাস্তার পাশে এভাবেই ময়লা ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে যেমন দুর্গন্ধে চলাচল করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। লোকালয়ে এমন ময়নার ডাম্পিং স্টেশন আমাদের সাধারণ জনগণের কারো কাম্য নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সেলিম জানান,
শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় ময়লার বড় স্তূপ প্রায় সব সময়। পৌরসভা ট্রাক ভর্তি করে নিলেও ময়লা থেকেই যায়। কারণ প্রতিদিন নিয়মিত ময়লা অপসারণ করা হচ্ছে না। এখানে টনে টনে ময়লা জমে। ময়লাগুলো কেন রাস্তার মাঝে সড়ক দ্বীপ এবং রাস্তার অংশ জুড়ে ফেলা হয় তাও বোধগম্য নয়। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
শিক্ষক সাইফুর রহমান বলেন, বাজারের চরম দুর্গন্ধজনিত ময়লা রাস্তার ওপর স্তূপ করে রাখা হয়। পুরো এলাকার পরিবেশ বিষিয়ে তুলে ট্রাকে তুলে ময়লা নেয়ার পরও দুর্গন্ধ থেকেই যাচ্ছে। কসাইখানার ময়লা এখানেই স্তূপ করা হয়। লোকজনের চলাচল কম অর্থ্যাৎ ভোর রাতের পরিবর্তে ময়লা নাড়াচাড়া করা হয় লোকজনের চলাচল বা বাজার টাইমে। ময়লা আবর্জনা সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়াটিই ত্রুটিপূর্ণ। এই যুগে এটি মেনে নেয়া যায় না।
আরও পড়ুন: দখল হচ্ছে পিরোজপুর পৌরসভার খাল, আবর্জনায় ভরা ড্রেন
মানিকপুরের জয়নাল আবেদীন বলেন, রাত ১০ থেকে ১১ টার দিকে সড়ক ঝাড়ু দিতে আসে। কিন্তু এই ঝাড়ু যথাযথ নয়, অনেকটা দায়সারাভাবে কাজটি করা হয়। আর ঝাড়ুর ময়লাগুলো স্তূপ করে রাখা ও অপসারণ বিলম্ব নিয়ে অভিযোগেরও প্রতিকার নেই।
সলিট ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নামে ১০০ কোটি টাকার প্রকল্প পাইপ লাইনে রয়েছে। পরিবেশবান্ধব এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ডাম্পিং এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে উল্লেখ করে মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন,
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মুন্সিরহাট এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে, সেখানে এলজিডি এর মাধ্যমে একটি প্রকল্পের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের মুন্সিরহাট সংলগ্ন যে জরাজীর্ণ ব্রিজ আছে সেই ব্রিজটির মেরামত করা হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যে ব্যবস্থা সেটা হবে পরিবেশবান্ধব দূষণমুক্ত এবং বর্জ্যগুলোর মাধ্যমে বায়োগ্যাস বা জৈব সার তৈরি করা হবে। এখনো আমরা বরাদ্দ পাইনি। আশা করি, ভবিষ্যতে বরাদ্দ হলে আমরা কাজটি বাস্তবায়ন করব।
প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৮ মেট্রিক টন বর্জ্য নিয়ে রাখা হয় মুন্সিরহাট-খাসকান্দি এলাকায়। পোনে ১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার ৭২ হাজার মানুষের বসতির বর্জ্য এনে ফেলা হচ্ছে এই লোকালয়ে।
]]>