মিয়ানমারের ভূমিকম্প সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে

৩ সপ্তাহ আগে
মিয়ানমারে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে এবং চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামেও এর কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এএফপির জানিয়েছে, ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন সরকারি ভবন ধসে পড়েছে। কমপক্ষে ৬৭ জন নির্মাণ শ্রমিক ভবনের ধ্বংসাবশেষে আটকা পড়েছেন। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, অন্তত ৮০ জন আটকা পড়েছে।

 

ভূমিকম্প কতটা শক্তিশালী 

 

চীনা ভূমিকম্প বিষয়ক কর্তৃপক্ষ চাইনিজ সিসমোলজিকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মতে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৯। ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ ইউরোপিয়ান-মেডিটেরানিয়ান সিসমোলজিকাল সেন্টারের মতে, এর মাত্রা ছিল ৭.৭।

 

ইউরোপিয়ান সেন্টার বলছে, ভূমিকম্পটি ঘটে মিয়ানমারের মান্দালয় শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, যেখানে প্রায় ১২ লাখ মানুষ বাস করে। আর এর কেন্দ্রস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে।

 

তবে চীনা ভূকম্পবিদরা মনে করেন যে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল ৩০ কিলোমিটার গভীরে। আর এর কেন্দ্রস্থল ছিল ২১.৮৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৫.৯৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।

 

চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে কম্পন অনুভূত

 

চীনা ভূকম্পন বিষয়ক প্রশাসন জানিয়েছে, প্রথম ভূমিকম্পের ১২ মিনিট পর ৬.৪ মাত্রার দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি রেকর্ড করা হয়েছে ২১.৬০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯৫.৯৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে। এর কেন্দ্রস্থল ছিল ৩০ কিলোমিটার গভীরে।

 

ক্ষয়ক্ষতি 

 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাউ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে ইরাবতী নদীর ওপর ৯০ বছরের পুরনো ১ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। এটি মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের শহরতলির সাথে সাগাইং শহরের সংযুক্ত করেছিল।

 

মিয়ানমার নাউয়ের তথ্য অনুসারে, মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে বেশ কয়েকটি ভবন ধসে পড়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, মান্দালয়ের ঐতিহাসিক একটি প্রাসাদ আংশিকভাবে ধসে পড়েছে।

 

দ্য টাইমস জানিয়েছে, মধ্য মিয়ানমারের টাউঙ্গু শহরের একটি স্কুল ভবন ধসে কমপক্ষে ২০ জন শিশু আটকা পড়েছে।

 

এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ৩০ তলা বিশিষ্ট একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়েছে। এতে ধ্বংসস্তূপের নিচে কমপক্ষে ৬৭ জন শ্রমিক আটকা পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ২০ জনের মৃত্যু, আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন

 

দ্য নেশন জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর থাইল্যান্ডের পাতাল রেল কাজ করছে না। বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে।

 

সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, থাইল্যান্ডের রাজধানীর বিমানবন্দরগুলোতে বিমান অবতরণ করছে। তবে কয়েকটি বিমানবন্দর তাদের অবতরণের পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে।

 

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম খাওসোদ জানিয়েছে, থাই আবহাওয়া বিভাগ সম্ভাব্য আসন্ন আফটারশক সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

 

হতাহত 

 

থাইল্যান্ডের সিয়াম নিউজ পোর্টাল জানিয়েছে, ব্যাংককে ধসেপড়া ভবনে কমপক্ষে একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। আরও প্রায় ৮০ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

 

মিয়ানমারে একাধিক ভবন ধসে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছে। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ের একটি হাসপাতালের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এ খবর জানিয়েছে। তবে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার বরাতে এএফপি জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের রাজধানীতে অসংখ্য মানুষকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

 

নিউজ পোর্টাল ইলেভেন মিয়ানমার জানিয়েছে, মিয়ানমারে একটি মঠ ভবন ধসে পাঁচ শিশু এবং একজন প্রশিক্ষণরত সন্ন্যাসী মারা গেছেন।

 

উত্তর-পূর্ব মিয়ানমারের শান রাজ্যে একটি হোটেল ধসে পড়েছে। এর ধ্বংসস্তূপের নিচে প্রায় ২০ জন চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কমপক্ষে দুজন মারা গেছে।

 

পদক্ষেপ 

 

থাই প্রধানমন্ত্রী পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা জরুরি সভা করার জন্য ফুকেট প্রদেশে একটি কর্মসূচী স্থগিত করেছেন। ব্যাংককে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি।

 

থাইল্যান্ডের স্টক এক্সচেঞ্জ (এসইটি) ও ফিউচার এক্সচেঞ্জ লেনদেন স্থগিত করেছে। থাইল্যান্ডের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লায়েন্ট বা সেবাগ্রহিতাদের সীমিত পরিসরে পরিষেবা প্রদান করছে।

 

নিক্কেই সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানি অটোমোবাইল কোম্পানি নিসান ও হোন্ডা থাইল্যান্ডে তাদের কারখানার উৎপাদন স্থগিত করেছে।

 

রুশ কূটনৈতিক মিশনের কনস্যুলার বিভাগের প্রধান ইলিয়া ইলিন বলেছেন, রুশ দূতাবাস সম্ভাব্য আহত নাগরিকদের খোঁজখবর নিচ্ছে।

 

আরও পড়ুন: মিয়ানমারে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

 

ট্যুর অপারেটররা জানিয়েছে, ভূমিকম্পে কোনো পর্যটক হতাহহত হয়নি। রুশ ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন (এটিওআর) জানিয়েছে, ফুকেট, পাতায়া ও দ্বীপপুঞ্জের পর্যটকরা স্বাভাবিকভাবে ছুটি কাটাচ্ছেন।

 

প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২ হাজারের মতো রুশ পর্যটক ব্যাংককে থাকতে পারেন। তাদের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ ‘প্যাকেজড ট্যুর ট্রাভেলার’। 
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন