এদিকে সাগরতীরে হকারদের উৎপাত বন্ধে নেই ট্যুরিস্ট পুলিশ কিংবা প্রশাসনের তেমন উদ্যোগ। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ পর্যটকরাও। তবে প্রশাসন বলছে, বালিয়াড়ির কিটকটের (ছাতা) পর হকারদের নামার কোন অনুমতি নেই। এটা নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা। সরেজমিনে দেখা যায়, তীব্র রোদ আর মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি। নোনাজলে বেড়েছে ঢেউয়ের তীব্রতা। তারপরও থেমে নেই ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস। মেতে রয়েছেন সাগরের নোনাজল আর বালুচরে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, তাই সৈকত শহর কক্সবাজারে ভিড় করেছে হাজার হাজার পর্যটক। প্রতিটি পয়েন্টের সাগরতীরে চলছে আনন্দ উৎসব। পরিবার-পরিজন কিংবা প্রিয়জনের সঙ্গে মেতেছেন খুনসুঁটিতে।
মা-বাবার সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখতে আসা তরুণী রিয়া বলেন, ‘পরীক্ষার আগে একটু ঘুরতে এসেছি। উপভোগ করতে এসেছি সাগর, আকাশ, বাতাস, আমাদের এই সুন্দর প্রকৃতিকে। আমাদের বাংলাদেশের এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত খুবই সুন্দর এবং আমাদের জন্য খুবই আনন্দদায়ক। কিন্তু হকারদের উৎপাতে অনেক সময় সেই আনন্দটা আর তেমন হয়ে ওঠে না।’
আরও পড়ুন: কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঘোষণা স্থগিত, নতুন প্রজ্ঞাপন রোববার
এদিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রতিনিয়ত দলে দলে নোনাজলে যাচ্ছে ভ্রমণপিপাসুরা। কিন্তু এই প্রবেশদ্বার হকারদের দখলে। সারিবদ্ধভাবে হকাররা বসে থাকায় অনেকেই নোনাজলে নামতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। যা নিয়ে বিব্রতবোধ করছেন পর্যটকরা। আবার বালিয়াড়ির কিটকটে বসে সমুদ্র উপভোগ করছেন অনেক পর্যটক। কিন্তু সেখানেও হকারদের উৎপাত। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ ভ্রমণে আসা পর্যটকরা।
সুগন্ধা পয়েন্টের বালিয়াড়ি পেরিয়ে নোনাজলে নামছেন কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, কিভাবে নোনাজলে নামবো-দেখেন টুল টেবিল নিয়ে হকাররা যেভাবে বসে রয়েছে; তাতে মনে হচ্ছে এটা হকারদের দখলে। পান-সিগারেট, ঝাল মুড়ি, আচার, প্লাস্টিক সামগ্রী, কলা, ছোলা, আইসক্রিম, আনারকলি, পেয়ারা, আনারস বিক্রেতারা সবাই বসে আছে সাগরতীরে। এটা খুবই বিরক্তকর। তাদের কারণে সাগরেও নামা যাচ্ছে না এমন অবস্থা।
আরেক পর্যটক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হকারের জন্য তো হকার মার্কেট দেয়াই হয়েছে। তারপরও তারা নিজেদের নির্দিষ্ট জায়গা বাদ দিয়ে সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দোকান করছে। এখানে হকার ব্যবসায়ি এতো বেশি রয়েছে যে স্বস্তিতে একটু ঘোরা যাচ্ছে না।’
কিটকটে বসে সমুদ্র উপভোগ করা পর্যটক আমানউল্লাহ বলেন, ‘কিটকটে (ছাতা) বসে একটু সমুদ্রও উপভোগ করতে পারছি না। দেখেন, ১ মিনিটের মধ্যে ২০ জনের বেশি হকার আমার কাছে এসেছে। প্রথমে শামুক-ঝিনুক বিক্রেতারা, তারপর একে একে কপি, পানি, আচার, চিপস, সিগারেট, আইসক্রিম, পেয়ারা, আনারকলি, আনারস, ছোলা, বেলুন ও ঘড়ি বিক্রেতারা। এর মাঝেও ভিক্ষুক এসেছে কয়েকবার। এগুলো দেখার জন্য যেন সৈকতের কেউ নেই। খুব বাজে একটা অবস্থা সাগরতীরে।’
সৈকতের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সাদ্দাম বলেন, সুগন্ধা সমুদ্র সৈকতের প্রবেশদ্বার এটি। এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি হকাররা যে যার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে দোকানপাট খুলে বসেছে। যেটি না বললেই নয়, এখানে প্রশাসনের লোকজন থাকার পরও তাদের যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। আবার অনেক রোহিঙ্গাও ব্যবসা করছে।’
সিগারেট বিক্রেতা হালিম বলেন, ‘জোয়ার এসেছে, কোনো জায়গা ছিলো না তাই এখানে দাঁড়িয়েছি। একটু পর সরে যাব।’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান বলেন, হকারদের ব্যাপারে কঠোর হতে গেলেও সমস্যা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অনেকেই তদবির করা শুরু করে। তবে হকারদের ছাতার পরে নামার কোন অনুমতি নেই। এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে পর্যটকের মোবাইল ছিনতাই, পুলিশের জালে ৫
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো: আপেল মাহমুদ বলেন, প্রতিদিনই হকারদের বালিয়াড়ি থেকে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু ফের এসে বসে যায়। এখন হকারদের নাকি কার্ড আছে কিন্তু হকারদের কার্ড কে দেয়? এখানে পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন এবং বিচ কর্মী আছে। বিচ কর্মীর কাজ হচ্ছে হকারদের সরানো। ট্যুরিস্ট পুলিশের কাজ না হকারদের সরানো। এরপরও আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করি হকারদের সরানোর। পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিচ কর্মী চাইলেই পারে হকারদের সরাতে।
অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ আরও বলেন, এমন তথ্য রয়েছে জনপ্রতি হকারদের কাছ থেকে সকালে ৫০ টাকা এবং বিকেলে ৫০ টাকা নেয়। কারা নেয়? এগুলো বের হলে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলেই সৈকতকে হকারমুক্ত করা যাবে। জেলা প্রশাসককে এই বিষয়গুলো অবহিত হতে হবে।
]]>

৪ সপ্তাহ আগে
৭







Bengali (BD) ·
English (US) ·