গত আড়াই বছরের মধ্যে চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ১০৭টি ভূ-কম্পন অনুভূত হয়েছে। যেগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্তে। এরমধ্যে ২০২৩ সালে ৩২ দফা, ২০২৪ সালে রেকর্ড ৫৩ এবং চলতি বছরের চার মাসে ২২ দফায় ভূকম্পন অনুভূত হয়। গড়ে তিন থেকে ৫ মাত্রায় এই ভূকম্পন অনুভূত হলেও সবশেষ ২৮ মার্চ ভূমিকম্পে রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল সাতের বেশি।
মিয়ানমার বা বার্মিজ টেকটনিক প্লেটের খুব কাছেই অবস্থান বন্দরনগরী চট্টগ্রামের। আবার ইন্ডিয়ান কিংবা ইউরেশিয়ান প্লেটের বেশি দূরে নয় এই অঞ্চল। গতিশীল তিনটি টেকটনিক প্লেটের কোথাও আট কিংবা সাড়ে আট মাত্রার ভূকম্পন সৃষ্টি হলে কম দূরত্বের কারণে চট্টগ্রামে তা অনুভূত হবে রিখটার স্কেলে ছয় থেকে সাত মাত্রায়।
আরও পড়ুন: ফের ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প
আর তাতেই চট্টগ্রামের ৮০ শতাংশ বহুতল ভবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ৭০ হাজারের বেশি মানুষ হতাহত হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভূমিকম্পে শুধু হতাহত না, বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রাম বন্দর।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তথ্যমতে, ৬০ বর্গমাইলের এ নগরীতে বর্তমানে ৪ লাখ ১ হাজার ৭২১টি বহুতল ভবন রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ভবন যেমন বিল্ডিং কোড মেনে হয়নি, তেমনি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ভূমিকম্প প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, সাত থেকে সাত মাত্রার বেশি আকারের ভূমিকম্প হলে চট্টগ্রামের ৭০-৮০ শতাংশ ভবন ভেঙে পড়বে। তাই বিপর্যয় মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
আরও পড়ুন: মান যাচাইয়ের পরামর্শ / শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু টিকবে তো?
একদিকে, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ, অন্যদিকে সাগরের কারণে বাতাসে লবণাক্ততা। এর ফলে ভূমিকম্পে বহুতল ভবনগুলো সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ফায়ার সার্ভিসের।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে যে সকল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে, বেশিরভাগই হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে। তাছাড়া লবণাক্ততার সমস্যা রয়েছে। যা ঝুঁকির সৃষ্টি করছে।
সম্প্রতি, অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৯৪টি ভবন সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ জানিয়ে তালিকা পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
]]>