মামলা দিয়ে ‘ফিউচার ফাইবার ক্রাফট’ বন্ধের পাঁয়তারা, ৪ হাজার কর্মীর কী হবে?

৩ সপ্তাহ আগে
রংপুরে মামলা দিয়ে নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠান বন্ধে পায়তারার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চার হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন। উদ্যোক্তার অভিযোগ, থানা-পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও পাওয়া যায়নি কোনো প্রতিকার। প্রতিষ্ঠান ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগী ওই উদ্যোক্তা।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার মীরবাগ সাধু এলাকায় স্বামীর বাড়িতে পাটজাত পণ্য তৈরি শুরু করেন নারী উদ্যোক্তা বিলকিস বেগম। তিনি স্থানীয় পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি করেন। সেই কোম্পানী পাট, হোগলা পাতাসহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করে এবং বিলকিস বেগম স্থানীয় নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাটজাত পণ্য উৎপাদন করে আসছেন। 


ক্রমান্বয়ে তার প্রতিষ্ঠান ‘ফিউচার ফাইবার ক্রাফট’ বড় হতে থাকে। গ্রামীন প্রান্তিক নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ায় এ কাজের সঙ্গে মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিলকিস বেগমের নিজস্ব কারখানা ও প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে পাটজাত পণ্য উৎপাদন করে আসছিলেন নারীরা। বর্তমানে চার হাজারেরও বেশি নারী পাটজাত পণ্য উৎপাদন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। উদ্যোক্তা বিলকিস বেগমের এগিয়ে যাওয়াকে মেনে নিতে পারেননি তার শাশুড়ি, ননদ, ননদের স্বামী! 

আরও পড়ুন: কেঁচো সারে ‘বড়লোক’ কামরুন নাহার

গত ৮ মার্চ দুপুরে বিলকিস বেগমের অনুপস্থিতিতে এক দল সন্ত্রাসী বাহিনীকে নিয়ে বিলকিস বেগমের ননদ, ননদের স্বামী, ভাতিজা, ভাতিজা বউ এসে বাড়ি ও কারখানার ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। এছাড়াও কারখানার ক্যাশে থাকা ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যায়। খবর পেয়ে উদ্যোক্তা বিলকিস বেগম ছুটে এসে বাড়ি তছনছ দেখতে পান। পরে তিনি কাউনিয়া থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি এবং পরে লুটপাটকারীরা বৃদ্ধ শাশুড়িকে দিয়ে বিলকিস বেগমের নামে কাউনিয়া থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করিয়েছে। পুলিশ রহস্যজনকভাবে বিলকিসের মামলা না নিয়ে তার শাশুড়ির মামলা রেকর্ড করেছে। মামলায় বিলকিস বেগমসহ কারখানার ৬ শ্রমিককে আসামি করা হয়। 


মামলার পর থেকে তারা পুলিশি হয়রানিসহ প্রতিপক্ষের হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠান বন্ধের হুমকিতে চার হাজারেরও বেশি কর্মী তাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে শঙ্কায় পড়েছে।


পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী শ্রমিক রোকসানা আফরোজ বলেন, ‘এ গ্রামে আমাদের জন্ম। বিলকিস আপার স্বামীর বাড়িতে কারখানা করার পর আমরা প্রশিক্ষণ নিয়ে পাটের ব্যাগ, ঝুড়ি তৈরি করি। সেখান থেকে যে টাকা আসে তা দিয়ে সংসারের কাজে লাগাই। কয়েকদিন আগে কারখানা বন্ধ করার জন্য ওনার (বিলকিস) আত্মীয়রা কারখানায় এসে সব মালামাল নিয়ে যায় এবং কারখানা চালু করলে পরিণতি ভালো হবে না বলে হুমকি দেয়।’


কর্মী আমজাদ মিয়া বলেন, ‘কারখানা বন্ধ করাই হলো উনাদের মূল উদ্দেশ্য। একজন বিধবা মহিলা করে খাচ্ছে সেটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। বাড়ি ভিটায় তাদের কোন জমি না থাকলেও তারা জোর করে দখল করার চেষ্টা করছে। এ কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের গ্রামের নারীদের আর কোনো কাজ থাকবে না। আমরা চাই প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে সমস্যাটি সমাধান করুক।’


সমাজকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নারী উদ্যোক্তা হিসেবে বিলকিস বেগম গ্রামে ভালো কাজ করছে। তার উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এখানকার নারীদের হাতে টাকা থাকছে, তারা স্বাবলম্বী হচ্ছে। এমন একজন নারীর প্রতিষ্ঠান বন্ধে অপচেষ্টা চলছে। আমরা চাই প্রশাসন কারখানা বন্ধ চেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক।’


ভুক্তভোগী বিলকিস বেগম সময় সংবাদকে বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। পরে কারুপণ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি পাটজাত পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেই। গ্রামের নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এ কাজ শুরু করি। আমার আওতায় চার হাজারেরও বেশি নারী কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতি দেখে আমার ননদ, ননদের স্বামী, ভাতিজারা আমার পেছনে উঠে পড়ে লেগেছে। যেহেতু আমার স্বামী নেই, আমার একটি মেয়ে আছে, আমি নিরুপায়। তাই আমার ওপর এমন অমানবিক কাজ করা হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা দিলেও পুলিশ সেই মামলা নেয়নি। এরপর আমার বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে আমার ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের নামে মামলা করিয়েছে। যেন প্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করতে না পারি।’

আরও পড়ুন: খাগড়াছড়ি / বিউটিফিকেশন-ফ্যাশন ডিজাইনের প্রশিক্ষণ পেল তৃণমূলের নারীরা

তিনি বলেন, ‘আমি একজন অসহায় নারী ও উদ্যোক্তা হিসেবে প্রশাসন আমার ওপর সুবিচার করবে সেই প্রত্যাশা করছি। মামলার বাদী পক্ষের লোকজন আমাকে অব্যহত হুমকি, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমি যেন আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারি, প্রশাসনের কাছে সেই সহযোগিতা চাইছি।’


বিলকিসের ননদের স্বামী শাহেদুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কারখানা লুটপাটের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক হইছেন তো কী হইছে। আপনারা সাংবাদিকরা কী করবেন করেন। আমরা আমাদের মতো কাজ করে যাব।’


এ ব্যাপারে কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুল লতিফ শাহ বলেন, ‘উদ্যোক্তা বিলকিস বেগমের প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাটের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। সেটি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন