মাদারীপুরে অকেজো আড়াইশোর বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা, চুরি-ছিনতাইয়ে জনমনে বাড়ছে আতঙ্ক

১৪ ঘন্টা আগে
মাদারীপুর শহরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বসানো আড়াইশোর বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা এক বছরের বেশি সময় ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কোথাও ক্যামেরা আছে, কিন্তু বক্স নেই; আবার কোথাও বক্স আছে, কিন্তু ক্যামেরা নেই। এই সুযোগে শহরে চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিংসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে উদ্‌বিগ্ন শহরবাসীকে স্বস্তি দিতে শিগগিরই ক্যামেরাগুলো সচল করার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার।

মাদারীপুর নতুন শহরের কালিবাড়ি এলাকা। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানকার সড়কের মাধ্যমে যাতায়াত করে। নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এখানে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। তবে এক বছর ধরে এটি অচল হয়ে পড়েছে, যা এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

 

একই অবস্থা শহরের সুমন হোটেল মোড়, কলেজ রোড, বটতলা, বাদামতলা, পুরানবাজার, লেকের পাড়, ডিসি ব্রিজ ও ইটের পুলসহ মাদারীপুর পৌরসভার অন্যান্য এলাকায়। সরজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ ক্যামেরায় নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, নেই ইন্টারনেট সংযোগ। কোথাও কোথাও চুরি হয়ে গেছে ক্যাবল, আবার অনেক স্থানে ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: পৌরসভায় বাস করলেও ভরসা ডিঙি নৌকায়, ভোগান্তির শেষ নেই ‘নতুন মাদারীপুর’ গ্রামবাসীর

 

ফলে ক্যামেরাগুলো কার্যকর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে। এতে উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডও বাড়ছে।

 

মাদারীপুর পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৩৪টি মৌজায় প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ বসবাস করেন। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য কাজে শহরে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন কয়েক হাজার মানুষ। বিনোদনকেন্দ্র খ্যাত শকুনি লেকেও বিভিন্ন জেলার দর্শনার্থীরা ভিড় করেন।

 

তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের ২৯ মে সাবেক পুলিশ সুপার মাসুদ আলমের উদ্যোগে চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহযোগিতায় ৭০ লাখ টাকার ব্যয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২৬০টি অত্যাধুনিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। এসব ক্যামেরা জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে চলতি অবস্থায় অনেক ক্যামেরা কার্যকর না হওয়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

 

সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বিকল থাকায় অপরাধীরা বারবার সুযোগ নিচ্ছে। তাই শহরবাসী দাবি জানিয়েছেন, অচল ক্যামেরাগুলো দ্রুত সচল করা হোক। কালিবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রতন শীল বলেন, ‘সড়কের খুঁটিতে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। কিন্তু এক বছর ধরে এটি চালু নেই। ক্যামেরাটি চালু থাকলে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করা সম্ভব হতো। পাশাপাশি চুরি-ছিনতাইও বন্ধ হতো।’

 

আরও পড়ুন: মাদারীপুরে অনুমোদনহীন শতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ‘ঘুমে’ স্বাস্থ্য বিভাগ!

 

নতুন শহর এলাকার প্রেস ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘অধিকাংশ সড়কে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। এখন এগুলো আর চালু নেই, বিকল হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, এগুলো আবার সচল করা হোক। তখন দিন-রাত সব সময় আমরা নিশ্চিন্তে চলাচল করতে পারব।’

 

মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী মামুন খান বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো খুব দ্রুত চালু রাখা প্রয়োজন। তা না হলে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। তাই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো সিসিটিভি ক্যামেরা দ্রুত চালু করা হোক।’

 

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান বলেন, ‘নানা কারণে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। এই ক্যামেরাগুলো সচল করতে জেলা পুলিশ উদ্যোগ নিয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সুধীজনদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। ক্যামেরাগুলো মেরামত করার জন্য টেকনিশিয়ানের সঙ্গেও কথা হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সবগুলো ক্যামেরা চালু করা সম্ভব হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন