মাত্র দুইবার ভূ-কম্পন পরিমাপের পর নষ্ট হওয়া যন্ত্রটি চালুর কোনো উদ্যোগ নেই!

৩ দিন আগে
এক যুগের বেশি সময়েও সচল করা হয়নি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত ভূমিকম্প পরিমাপক যন্ত্র সিসমোগ্রাফ। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত দক্ষিণাঞ্চলে ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়কারী একমাত্র এ যন্ত্রটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অচল রয়েছে। ফলে গত শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প ও সম্প্রতি কিছু ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা জানা সম্ভব হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত একটি চুক্তির আওতায় দেশের পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং দুটি জেলা শহরে স্থায়ীভাবে এই সিসমোগ্রাফি যন্ত্র স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখ্তার।

বাস্তবিক জ্ঞান শেখার পথে অন্তরায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গবেষণা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিসমোগ্রাফটি নষ্ট থাকার কারণে। ছবি: সময় সংবাদ 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১০ সালের অক্টোবরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ যন্ত্রটি স্থাপিত হওয়ার পর মাত্র দুটি ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারিতে যন্ত্রটিতে সমস্যা দেখা দিলে একাডেমিক ভবনে আন্ডারগ্রাউন্ড চেম্বারের সঙ্গে ইন্টারনেটের পূর্ণাঙ্গ সংযোগসহ ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি চালু করা হয়। কিন্তু চালুর এক বছর না যেতেই আবারও নষ্ট হয়ে যায়।

 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্প: প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ নিয়ে যা বললেন উপদেষ্টা

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূ-কম্পনের ফলে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে। চারটি ওয়েভ একসঙ্গে বের হলেও প্রাইমারি এবং সেকেন্ডারি ওয়েভ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। সার্ফেস এবং রিলে ওয়েভ পাওয়ার এক-দুই মিনিট আগে এই সতর্কবার্তা পাওয়া সম্ভব। যদি ২৪ ঘণ্টা এ যন্ত্র মনিটর করা হয় তাহলে জনগণকে ভূমিকম্প সম্পর্কে অবহিত করার পাশাপাশি জানমালের ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব। এছাড়া এই যন্ত্রের অংশ বিশেষ (প্লেট) মাটির নিচে থাকে। এই প্লেটের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ভূমির অবস্থান নির্ণয় করা হয়। অর্থাৎ ভূমির অবস্থান ওপরে উঠছে, নাকি নিচে নামছে তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

 

এদিকে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্রটি এক যুগ ধরে অচল থাকায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, এই যন্ত্রটি সচল থাকলে আমরা এ থেকে শিখতে পারতাম এবং জানতে পারতাম, এখন শুধু বই কলমের মাধ্যমে আমরা শিখতে পারি কিন্তু বাস্তবে পারছি না। তাই আমাদের জানতে এবং শিখার জন্য এই যন্ত্রটি সচল করার দাবি জানাচ্ছি।

 

আরও পড়ুন: বারবার ভূমিকম্পে কাঁপছে দেশ: কোন জেলাগুলো কম ঝুঁকিপূর্ণ

 

পটুয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের, ডিজাস্টার রেজিলিয়েন্স এবং  ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফোসর,  ড. রমন কুমার বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে যেভাবে বাংলাদেশে ভূমিকম্প বাড়ছে এর মাত্রা আমরা দেশবাসীকে জানাতে পারছি না, পাশাপাশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে আমরা শিখাতে পারছিনা যন্ত্রটি নষ্ট থাকার কারণে। এটি যদি আমরা নতুন করে সচল করতে পারি শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা গবেষণা করতে পারবেন। এই এলাকার মানুষও উপকৃত হবে।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন