মাছ কেটে কত টাকা আয় করেন তারা

৬ দিন আগে
রান্না ঘরের মেঝেতে বসে আছেন রিনা বেগম। সামনে ধারাল বটি, এক থালা ছাই আর বিশাল সাইজের একটা রুই মাছ। জ্যান্ত মাছটি কয়েক আছাড় খেয়েও শান্ত হয়নি, লাফালাফি করেই যাচ্ছে। রিনা বেগম মাছটা তুলে বটির ওপর ধরলেই পিছলে গেল, লাফিয়ে পড়লো ছাইয়ের ওপর। রক্ত আর ছাই ছিটে ফ্লোর ভরে গেল। হতাশ রিনা বেগমের হাত কাঁপছে। বটিতে তর্জনী আঙুল কেটে রক্ত ঝরছে। চোয়াল শক্ত করে রিনা বেগম তার স্বামীকে বললেন, ‘আর কোনোদিন যদি আস্ত মাছ বাসায় এনেছো তো তোমার একদিন কি আমার একদিন!’ গল্পটি কাল্পনিক। তবে বাসায় নিয়ে মাছ কাটতে গেলে এমন বিড়ম্বনা স্বাভাবিক। এজন্যই রাজধানীর প্রতিটি বাজারে মাছ কাটার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে এই ব্যবস্থায়।

ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শুরু হয় কর্মচাঞ্চল্য। মাছের দোকানগুলোতে তখন ক্রেতাদের আনাগোনা আর বিক্রেতাদের হাঁকডাকে তৈরি হয় জমজমাট পরিবেশ। মাছ যারা কাটেন তাদেরও ব্যস্ততা বাড়ে।

 

কারওয়ান বাজারের আড়তদের বাইরের রেলক্রসিংয়ের পাশের রাস্তায় রোড ডিভাইডারের ওপর বসে মাছ কাটেন অনেক নারী-পুরুষ। অনেকে আবার মাছ কাটেন কিচেন মার্কেটের পিছনের রাস্তায় ভাসমান সবজি দোকানের পাশেই।

 

তাদেরই একজন মো. দিপু। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২-১টা পর্যন্ত মাছ কাটি। সকালের দিকে চাপ বেশি থাকে। গড়ে প্রতিদিন ১০০ কেজির ওপর মাছ কাটা হয়।’

 

আরও পড়ুন: অস্থির বাজার, নিত্যপণ্যে হাঁসফাঁস ভোক্তার

 

মাছ কেটে প্রতিদিন ১২০০-১৫০০ টাকা আয় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে ৬০০-৮০০ টাকা। এই টাকা দিয়েই সংসার চালাই। তবে প্রতিদিন সমান আয় হয় না। কোনো কোনো দিন আয়ই হয় ৬০০-৮০০ টাকা বা তারও কম। তখন খরচ বাদে হাতে থাকে খুবই সামান্য।’

 

কারওয়ান বাজারে মাছ কাটছেন মো. দিপু। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

ছোট মাছ কাটতে কেজি প্রতি ৩০-৬০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। তবে বড় মাছের ক্ষেত্রে দাম কিছুটা কমে যায়, ১০-২০ টাকা কেজি থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় মাছ কেটে দেই। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাছের আকারভেদে ১০০ টাকা পর্যন্তও নিই। যে মাছ কাটতে সময়-শ্রম বেশি লাগে, তাতে টাকাও কিছুটা বেশি নেয়া হয়।

 

ছোট মাছ কাটতে কষ্ট বেশি হওয়ায় পারিশ্রমিকও বেশি নেন ব্যবসায়ীরা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

কারওয়ান বাজারের রেলক্রসিংয়ের পাশের রাস্তায় রোড ডিভাইডারের ওপর বসে মাছ কাটেন সানি। তিনি বলেন, ‘রুই মাছ ১৫-২৫ কেজিতে কেটে দিই। মাঝারি টেংরা ৩০-৪০ টাকায় কেটে দিই, ছোট টেংরা হলে আরও কিছু বেশি পড়ে।’

 

কেউ কেউ দিনে ৩০০ কেজি মাছও কাটে। তবে প্রতিদিন সমান হয় না। বৃষ্টি হলে কোনো কোনো দিন ১০০ কেজির নিচেও হয়। রোজার সময় কম হয়। মাছ কেটে দিনে ১ হাজার টাকার বেশি আয় হয়। কেউ কেউ অবশ্য ১৫০০-২০০০ টাকাও আয় করে।

 

কারওয়ান পাইকারি বাজারের আড়তদের বাইরে রোড ডিভাইডারের ওপর বসে মাছ কাটছেন কয়েকজন। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

মাছ কাটার পেশার সঙ্গে জড়িত এক নারী বলেন, ‘বেশি ভিড় থাকে সকাল ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে। তখন একসঙ্গে ১০-১২ জন ক্রেতাও মাছ কাটাতে আসে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু এটাই আমাদের উপার্জনের সময়। যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসারের খরচ চালাই। এতে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা করাতে পারছি।’

 

আরও পড়ুন: ‘হিসাবকিতাব বুঝি না, বাজারে স্বস্তি চাই’

 

কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা আসা আমিনুল বলেন, ‘মাছ কাটার কাজটা আসলে কষ্টকর। তাই তারা যা নেয়, সেটা ন্যায্যই। সময় বাঁচে, ঝামেলাও কমে যায়।’

 

আরেক ক্রেতা প্রশান্ত বলেন, ‘বাড়িতে মাছ কাটতে গেলে অনেক ঝামেলা হয়। এখানে সামান্য খরচ দিলেই মাছ পরিষ্কার করে দেয়। বাসায় নিয়ে ধুয়ে ফেললেই রান্নার জন্য একেবারে প্রস্তুত হয়ে যায়। তবে মনে হয় ছোট মাছ কাটার দামটা একটু বেশি।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন