মশায় কাবু গাজীপুর

১ সপ্তাহে আগে
মশার উপদ্রবে বেহাল অবস্থা গাজীপুরে। ঘরে ঘরে জন্ম নিচ্ছে এডিসের লার্ভা। নেই সচেতনতা, নেই মশা নিধনের তৎপরতাও। এমন বাস্তবতায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা।

গাজীপুর মহানগরীর ব্যাংক মাঠ বস্তিতে সরেজমিনে দেখা যায় বাসিন্দা হ্যাপি আক্তারের ঘরে জন্ম নিচ্ছে এডিসের লার্ভা। অথচ টানা ২ বার ভয়ংকর ডেঙ্গুতে ভোগা হ্যাপি এ মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে চেষ্টার কোনো কমতি রাখেননি। এমন পরিস্থিতিতে স্বামী সন্তান নিয়ে প্রতিনিয়তি দুশ্চিন্তা নিয়েই বসবাস তার। 


হ্যাপি আক্তার বলেন, ‘এখানকার ট্রেনগুলো কখনো পরিষ্কার করা হয় না, কখনো মশার ওষুধও ছিটানো হয় না। তাই এমন মশার উপদ্রব।’
 

হ্যাপির মতো এমন পরিস্থিতি গাজীপুর মহানগরীর ব্যাংক মাঠ বস্তির প্রতিটি ঘরে ঘরে। নেই ডাস্টবিন তাই উন্মুক্ত খেলার মাঠ পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। আবদ্ধ স্থানে দীর্ঘদিনের জমে থাকা পানিতেও জন্ম নিচ্ছে লার্ভা। ফলাফল, প্রায় ছয় হাজার মানুষ বসবাসের এ বস্তির প্রতিটি ঘরেই রয়েছে ডেঙ্গু রোগী। 

আরও পড়ুন: থামছেই না ডেঙ্গুর হানা, নতুন আক্রান্ত ২০৪ জন

বস্তির বাসিন্দারা বলেন, ‘আমার এখানকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একেবারেই নেই। তাই বাধ্য হয়েই মাঠে ময়লা ফেলি। ছোট্ট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তি আমাদের ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। হাসপাতালের অবস্থা আরও ভয়াবহ, জায়গা না পেয়ে বারান্দা ফ্লোরে থেকে হলে চিকিৎসা নিচ্ছে মানুষ।’


ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১৯ টি বস্তি রয়েছে গাজীপুর মহানগরীতে। এখানকার ঘিঞ্জি এলাকাগুলো যেন এক একটি মশার প্রজনন ক্ষেত্র। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, মশা মারতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। কর্তৃপক্ষের এমন নিরব ভূমিকায় প্রতিদিনই জেলার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন থাকলে চলতি মৌসুমে মশাবাহিত এই রোগ পরিণত হতে পারে মহামারীতে। 


ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন বলেন, ‘সামান্য জ্বর এসেছিল, তাই বাড়িতে থেকেই ওষুধ খাচ্ছিলাম। পরে যখন কোনো উন্নতি দেখতে পাচ্ছি না এবং শরীরে প্রচুর ব্যথা অনুভব করি, তখন হাসপাতালে আসি। ধীরে ধীরে ধরন পাল্টাচ্ছে ডেঙ্গু। নতুন রূপে ফিরে আসা এ ভাইরাস ধরা পরে না পরীক্ষাতেও। তবে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখন পর্যন্ত সফলভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে বিশেষায়িত শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 

 

হাসপাতালের পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ডেঙ্গুর ৪ টি ধরন রয়েছে। এতদিন আমরা একটা ধরনের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। কিন্তু এখন অন্য আরেকটা ধরন দেখছি, অনেক সময় টেস্টেও ধরা পড়ে না এই রোগ। তবে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে টেস্টে ডেঙ্গু ধরা না পরলেও চিকিৎসা দিচ্ছি।’


ডেঙ্গু ভাইরাসের এই তাণ্ডব এখন শহর থেকে ছড়িয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামাগঞ্জেও। তাই এই ভাইরাস মোকাবেলায় চিকিৎসকদের ট্রেনিং আর প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে আগেভাগেই প্রস্তুতি সেড়েছে উপজেলা ক্লিনিকগুলোও। 


গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান বলেন, ‘আমাদের উপজেলাগুলোতে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগী আসছে। ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। এসব বিবেচনায় সকল হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। অনলাইনে হলেও সবাইকে ট্রেনিংও দেয়া হয়েছে। প্রতি বছর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণের মৌসুম ধরা হলেও এ বছর জুন-জুলাই মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। তাই এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন