ভোলায় চিকিৎসকের ৭০ শতাংশ পদ শূন্য, স্বাস্থ্যসেবা কোন পথে?

৩ সপ্তাহ আগে
চিকিৎসক সংকটে ধুকছে ভোলার স্বাস্থ্যসেবা। জেলায় ২৬৩ চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৭৯ জন। শূন্য আছে জেলায় প্রায় ৭০ শতাংশ চিকিৎসকের পদ। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা।

জানা যায়, জেলা সদরের ২৫০ শয্যার একটিসহ মোট ৮টি হাসপাতালের চিকিৎসক সংকটে সেবা দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কর্মরত চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছেন না। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলতে থাকায় দিন দিন ভেঙে পড়ছে জেলার স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। এতে ভোগান্তিতে পড়া রোগীদের চিকিৎসকের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে। চিকিৎসকদের মারধরসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে হাসপাতালে। এ দুর্ভোগ লাগবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক পদায়ন ও ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন করছেন বিভিন্ন সংগঠন।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকের পদ ৬১টি। তার বিপরীতে বর্তমানে আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। এতে একজন চিকিৎসক দিনে ও রাতে টানা ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তারপরও সেবার বাইরে থেকে যান ইনডোরের অনেক রোগী। তিন চিকিৎসকের সেবা একজন দিতে গিয়ে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক।

 

ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল সূত্র জানায়, সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত এক রোগীকে যথাসময়ে চিকিৎসা দিতে না পারায় বিক্ষুব্ধ স্বজনদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন নাহিদুল হাসনাত নামে জরুরি বিভাগের এক মেডিকেল অফিসার। ঈদুল ফিতরের পর প্রকৃত চিকিৎসার অভাবে এ হাসপাতালেই চার শিশুর মৃত্যু হয়েছে। 


আরও পড়ুন: নাটোর সিভিল সার্জন কার্যালয়ে স্বাস্থ্য সহকারীসহ বিভিন্ন পদে চাকরি, পদ ৯৮

 

 

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জন চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। লালমোহন হাসপাতালে ১৪ জনের বিপরীতে দুজন, দৌলতখানে হাসপাতালে ১৪ জনের বিপরীতে দুজন, বোরহানউদ্দিন হাসপাতালের ১৫ জনের বিপরীতে চার, মনপুরা হাসপাতালে ১০ জনের মধ্যে তিন চিকিৎসক কর্মরত আছেন। চরফ্যাশন উপজেলার ১০০ শয্যা হাসপাতালে ডাক্তারের ২১টি পদের মধ্যে শূন্য এখনও ১১টি পদ।

 

রোগীদের অভিযোগ, দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো আছে, পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি আছে কিন্তু সেবা দেয়ার চিকিৎসক-নার্স নাই।

 

এ দিকে বছরের পর বছর এমন সংকট চলতে থাকলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ। সেবা বঞ্চিত রোগীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদে চিকিৎসক পদায়ন ও সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের দাবিতে ব-দ্বীপ ছাত্র কল্যাণ সংসদ, জার্নালিস্ট ফোরাম, আগামীর ভোলাসহ বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করছে। 


আরও পড়ুন: নেত্রকোনা মেডিকেল কলেজ সরানোর গুঞ্জন, যা জানাল কর্তৃপক্ষ


সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ভোলা জেলা সভাপতি মোবাশ্বির উল্যাহ চৌধুরী চিকিৎসক সংকটে রোগী সেবা বঞ্চিত হচ্ছে উল্লেখ করে এর সমাধানের জন্য ভোলায় একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানান।


এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম নবী আলমগীর জানান, চিকিৎসক সংকট দূর করতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানে সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।


প্রয়োজনের চেয়ে কম চিকিৎসক দিয়ে সেবা চালাতে গিয়ে সমস্যা প্রকট হচ্ছে জানিয়ে ২০৫ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ সুফিয়ান রুস্তম বলেন, ‘চিকিৎসক সময়মতো পাওয়া যায় না। কেউ কেউ যোগদান করতে অনিহা প্রকাশ করছেন। একজনের ওপর তিনজনের চাপ পড়ছে।’ 


আরও পড়ুন: ঈদে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে অধিদফতরের জরুরি নির্দেশনা


সিভিল সার্জন ডা. মু. মনিরুল ইসলাম বলেন, কম চিকিৎসক নিয়ে সেবা দেয়া খুবই কষ্টকর। সংকট সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে চিঠি দেয়ার কথা জানান তিনি।


চিকিৎসক ছাড়াও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে দ্বিতীয় শ্রেণির ৩২৫ জনের মধ্যে ১৫৭টি পদ ও তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির এক হাজার ২৫১টি পদের মধ্যে ৪১১টি পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া টেকনিশিয়ানের অভাবে বন্ধ আছে হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অধিকাংশ যন্ত্রপাতি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন