ভূমধ্যসাগরে প্রতিদিন গড়ে একজন অভিবাসী শিশুর মৃত্যু: ইউনিসেফ

২ দিন আগে
গত এক দশকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছানোর চেষ্টায় সাড়ে তিন হাজার অভিবাসী শিশু মারা গেছে অথবা নিখোঁজ হয়েছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশিত ইউনিসেফের ওই প্রতিবেদন মতে, প্রতিদিন গড়ে একজন অভিবাসী শিশু ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে অথবা নিখোঁজ হয়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, মৃত বা নিখোঁজ অভিবাসী শিশুর প্রকৃত সংখ্যা ‘আরো অনেক বেশি' হতে পারে।

 

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম জানিয়েছে, ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ২২ হাজার মানুষ মারা গেছেন অথবা নিখোঁজ হয়েছেন। আর তাই উত্তর আফ্রিকার উপকূল থেকে ইতালি পর্যন্ত বিস্তৃত সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় সমুদ্রপথটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক অভিবাসন রুট হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

এই অভিবাসন রুটের প্রতি ছয়জন অভিবাসীর মধ্যে একজন শিশু বলেও জানিয়েছে ইউনিসেফ। এসব শিশুদের বেশিরভাগই অভিভাবকবিহীন এবং তারা একাই এই ভয়াল সমুদ্র পাড়ি দিতে চেয়েছিল।

 

আরও পড়ুন: ইউক্রেনের উদ্দেশে ট্রাম্প / নিজের চেয়ে শক্তিশালী কারও সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানো ঠিক হয়নি

 

সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় রুট পাড়ি দেয়ার চেষ্টারত প্রতি ১০ জন শিশু ও তরুণের মধ্যে অন্তত সাত জন নানাভাবে শোষণের শিকার হয়েছে। এসব শিশুদের সহিংসতা, নির্যাতন, যৌন শোষণ, জোরপূর্বক শ্রম, বাল্যবিবাহ ও বন্দিদশার মতো ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে।’

 

প্রতিবেদনে ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল অভিবাসীবাহী একটি নৌকাডুবির কথা তুলে ধরেছে ইউনিসেফ। ওই নৌকাডুবির ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি মানুষ মারা যায় বা নিখোঁজ হয়। 

 

সংস্থাটি বলেছে, ওই নৌকাডুবির পরিবর্তে ‘এমন একটি মুহূর্ত হওয়া উচিত ছিল, যেখানে সব দেশ ও সম্প্রদায় এক হয়ে শিশুদের সুরক্ষায় তাদের নিজ দেশে এবং যাত্রার সময়ে এগিয়ে আসছে।’

 

ইউনিসেফ জানিয়েছে, ‘কিন্তু এটি না হয়ে গত এক দশক ধরে অসংখ্য নৌকাডুবির ঘটনায় হাজারো শিশু প্রাণ হারিয়েছে।’

 

আরও পড়ুন: ধ্বংসস্তূপের বাস্তবতা দেখতে ট্রাম্পকে ইউক্রেন সফরের আহ্বান জেলেনস্কির

 

ইউনিসেফ-এর ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক এবং ইউরোপমুখী শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক বিশেষ সমন্বয়কারী রেজিনা দে দমিনিচিস বলেন, ‘জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব দেশের সরকারকে অবশ্যই শিশুদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু অধিকার সনদে অন্তর্ভুক্ত অধিকারগুলো শুধু সীমান্ত বা উপকূলেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শিশুরা যখন সীমান্ত অতিক্রম করে তখনও তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকা উচিত।’

 

এদিকে ইতালির কট্টর ডানপন্থি সরকারের প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নিয়েছেন নানা উদ্যোগ।

 

ইউরোপমুখী অভিবাসীদের একটি বড় অংশ উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়া ও লিবিয়ার উপকূল থেকেই ভাগ্য বদলের আশায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে থাকেন। তাদের বেশিরভাগেরই লক্ষ্য থাকে ইতালি পৌঁছানো। আর সেই দুটি দেশের সঙ্গেই চুক্তি রয়েছে ইতালির। চুক্তির আওতায় অভিবাসীদের যাত্রা ঠেকাতে কাজ করে দেশ দুটির প্রশাসন। বিনিময়ে তাদের অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে ইতালি।

 

আরও পড়ুন: বেলজিয়ামে ভারতীয় ব্যবসায়ী গ্রেফতার

 

ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের শুরু থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ হাজার ৮০৫ জন অভিবাসী দেশটির উপকূলে পৌঁছেছেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৫৮৮ জন ছিলেন অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ২০২৪ সালেও ইতালি পৌঁছেছেন আট হাজার ৪৩ জন অভিভাবকবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ১৮ হাজার ৮২০।

 

ইউনিসেফ জানিয়েছে, অভিবাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক শিশু এখনো ‘তাদের মৌলিক অধিকার' থেকে বঞ্চিত। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিন্ন আশ্রয়নীতি প্রণয়ন করার কারণে আগামী দিনগুলোতে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা আরও সুসংগঠিত হতে পারে বলে আশা করছে তারা। কিন্তু শিশুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই তা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

 

সমুদ্রে শিশুমৃত্যু ঠেকাতে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান বাড়ানোরও তাগিদ দিয়েছে ইউনিসেফ। বলেছে, একজন শিশু অভিবাসী হিসাবে একটি দেশে ঢোকার পরপরই তাকে তাৎক্ষণিক আইনি সুরক্ষার সুযোগ দিতে হবে। চলাচলের ওপর বিধিনিষেধের আরোপ করে কোনো শিশুকে অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্রে বা আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে রাখা উচিত নয় বলে মনে করে ইউনিসেফ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন