বেহাল সড়কে চরম ভোগান্তি, বারবার আশ্বাসেও মেলে না প্রতিকার

৩ দিন আগে
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় খানাখন্দে লক্ষ্মীপুরের জকসিন-পোদ্দার বাজার সড়কের এখন বেহালদশা। সড়কের বেশির ভাগ স্থানেই কাপেটিং উঠে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। এতে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সড়কটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এ সড়কে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ।

তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি শিগগিরই সংস্কারের আশ্বাস এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর।


সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা পুরো সড়ক জুড়ে। যানবাহন চলছে হেলেদুলে। আবার সড়কের কোথাও রয়েছে কাঁদা-পানির দখলে। বৃষ্টির পানি জমে সড়কের একেকটি গর্ত যেন পরিণত হয়েছে ছোট-খাটো ডোবায়। এমন বেহাল দশা লক্ষ্মীপুরের জকসিন-পোদ্দার বাজার সড়কের।


দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কটি এখন যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলায় হাজারো মানুষ যাতায়াত করে। অথচ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া জকসিন থেকে পোদ্দার বাজার পর্যন্ত ১০কিলোমিটারের সড়কটি এখন পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সড়কের বেহালদশায় চরম ভোগান্তিতে যাতায়াতকারীরা।


আরও পড়ুন: ভেঙে যাচ্ছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ সড়ক


স্থানীয়রা জানান, সড়কটির দুপাশে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছোট-ছোট ৫টি বাজার। এ ছাড়াও বৃহত্তর পোদ্দার বাজারকে ঘিরে জেলার সদরের সঙ্গে বাঙাখাঁ, বশিকপুর, পার্বতীনগর ইউনিয়ন ও রামগঞ্জ উপজেলাসহ পাশের নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার যোগাযোগের মাধ্যমও এ সড়কটি। অথচ সংস্কার না হওয়া সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এতে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।


স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটির প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মা ব্রিকস, বিবিএম ব্রিকস ও আরবিএম ব্রিকস নামে স্থানীয় তিনটি ব্রিক ফিল্ডের মাটিবাহী যানবাহন। এসব ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাক-ডাম্পট্রাক সড়কে চলাচল করায় ধুলোবালি আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদাপানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয়রা। একজন গুরুতর রোগী কিংবা প্রসূতি মা-বোনদের নিয়ে হাসপাতালে যেতে বেগ পেতে হয়, এতে বাড়ছে মৃত্যুর ঝুঁকি। মাটিবাহী ট্রাক চলাচল বন্ধসহ দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি স্থানীয়দের।


স্থানীয় বাসিন্দা মো. সোয়াহিদ বলেন, সড়কটির এমন অবস্থা, কোনো লোক অসুস্থ হলে যে হাসপাতাল নিয়ে যাব, সেটিও এখন দুষ্কর। সড়কের মাঝে এমন গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, যেন মাছ চাষ করা যাবে। সোজা কথা সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন বাস্তবতায় দ্রুত সড়কটি সংস্কারের দাবি জানান তিনি।


আরও পড়ুন: বেহাল ড্রেনেজ ব্যবস্থায় নাজেহাল শরীয়তপুর পৌরবাসী


কৃষি ব্যাংকের পোদ্দারবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত আমাদের এই সড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু রাস্তার যে বেহালদশা এতে করে আমাদের চলাফেরা করতে খুবই কষ্ট হয়। তাছাড়া অসুস্থ রোগীরা এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সড়কের বেহালদশার কারণে দুদিন আগে আমি নিজেও মোটরবাইক এক্সিডেন্ট করে আহত হই। প্রতিনিয়তই এ সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন মানুষ। আশা রাখছি দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারে সরকার পদক্ষেপ নেবেন, না হলে এই জনপদের মানুষ খুবই অসুবিধার মধ্যে পড়বে।’


লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, ‘সড়কটি ভাঙাচুরার কারণে কলেজে যেতে আমাদের খুবই কষ্ট হয়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে আমাদের শরীরে সমস্যা দেখা হয়। একদিন কলেজে গেলে পরের দিন আর কলেজে যেতে পারি না, শরীরে ক্লান্তিবোধ হয়। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটে আমাদের।’


লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার বলেন, ‘সড়কের বেহালদশার কারণে আমাদের যাতায়াতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে নির্ধারিত সময়ে আমরা পরীক্ষা কক্ষে উপস্থিত হতে পারি না। এতে নানা সমস্যা পড়তে হয় আমাদের।’


আরও পড়ুন: গ্রীষ্মেই জলজটে নাকাল রাজধানীবাসী, বর্ষায় কী হবে?


দত্তপাড়া বাজার ব্যবসায়ীরা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙা সড়কে পণ্য নিয়ে কোনো মালবাহী ট্রাক-পিকআপভ্যান আসতে চায় না। আসলেও কয়েক গুণ বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পড়তে হচ্ছে তাদের।


এ দিকে চালকরা জানালেন, এ সড়কে গাড়ি চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে যানবাহন। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।


ট্রাকচালক আল আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই সড়কে যে পরিস্থিতি, তাতে আমাদের গাড়ির চাকাও শেষ মাজাও শেষ। যে পরিমাণ রাস্তা ভাঙা এটি দ্রুত মেরামতের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’


অটোরিকশা চালক মনির বলেন, রাস্তা খারাপের কারণে এই সড়কে গাড়ি চালাতে আমাদের ভীষণ কষ্ট হয়। প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। যা ইনকাম করি, তা গাড়ির পিছনেই চলে যায়। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাদের।


আরও পড়ুন: চলাচল অযোগ্য ভোলার ১২ সড়ক, পৌরবাসীর দুর্ভোগ


পার্বতীনগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া কাজল আক্ষেপ করে জানান, সড়কে মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডি বিভাগকে জানানো হলেও কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাক বন্ধসহ দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন এই জনপ্রতিনিধি।


লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামশেদ আলম রানা জানান, জকসিন-পোদ্দার বাজার সড়কটি সংস্কারের জন্য এলজিইডি বিভাগকে বলা হয়েছে। জনদুর্ভোগ লাগবে ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাক প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।


সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক, বলেন, ‘এরই মধ্যে সড়কটি মেরামতের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রকল্পে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হবে।’
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন