বেহাল দশায় নন-ব্যাংকিং খাত, সংস্কারে ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা

২ সপ্তাহ আগে
পিকে হালদারের চার প্রতিষ্ঠানসহ ভেঙে পড়া নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরা এখনো ফেরত পাচ্ছেন না তাদের সঞ্চিত অর্থ। এমন অবস্থায় ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান সংস্কারে ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আর্থিক খাতের স্বার্থে কাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি আমানকারীদের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, লুটে নিয়েছে পুরো সমিতির ৫০০ মানুষের সঞ্চয়। পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারী জালালউদ্দিন হোসেন বলেন, ‘সমিতির সবার টাকা সংগ্রহ করে পিপলস লিজিংয়ে রাখার পর ছয়-সাত বছরেও ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক আমানতকারী হয়তো এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে মারা গেছেন। পিপলস লিজিং সমিতি আমানতের দায়িত্ব নিলেও অর্থ ফেরতের সময় তাদের ব্যক্তি বা পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না।’

 

২০১৪ সাল থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামে শেয়ার কিনে আস্থাভাজনদের বসিয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেয় পিকে হালদার অর্থাৎ প্রশান্ত কুমার হালদার। তার নিয়ন্ত্রণে নেয়া ৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ৯টি নন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নিয়ে এখন বিপাকে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

আর্থিক খাতে পিকে হালদারের ঘটনায় সে সময় আটক করা হয় পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতাপশালী নিয়ন্ত্রকদের। তবে ৫ বছরেও এসব প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ফেরেনি। বরং লুটপাটে ব্যাংক বহির্ভূত খাতের ৬টি প্রতিষ্ঠানে ৯৫ শতাংশের বেশি খেলাপি। ফলে একদিকে নতুন আমানত যোগ হচ্ছে না, অন্যদিকে নিজেদের অর্থ ফেরত পাচ্ছেন না অনেক আমানতকারী।

 

আরও পড়ুন: ক্যাশলেস অর্থনীতির পথে ঝুঁকি মোকাবিলায় জোর দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের

 

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিচ্ছে না এবং প্রতারণা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটি খাত সংস্কারের অংশ। তবে আমানতকারীদের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে যে তাদের টাকা তারা ফেরত পাবেন। প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করেও টাকা ফেরত দিতে হবে। এটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার স্বার্থেই করতে হবে।

 

ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে খেলাপি ঝুঁকিতে রয়েছে আভিভা, ফিনিক্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ক্যাপিটাল ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টিকে পুনর্গঠন করার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে লিজিং কোম্পানিগুলোর ভাগ্য ফেরাতে ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা চলছে খাত সংস্কারে।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এই সংস্কারের জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। যদিও এটি ব্যাংকের মতো খুব বড় অঙ্ক নয়, তবুও মোটামুটি ৭ থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হতে পারে। শুধু ব্যাংক নয়, নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সংস্কার করা হবে।

 

তবে আইডিএলসি, ইউনাইটেড, লঙ্কাবাংলা, অ্যালায়েন্স, ডিবিএইচ, আইপিডিসি ও স্ট্যাটিজিক ফাইন্যন্সসহ ১০ শতাংশের কম। যা দাঁড়িয়ে আছে গুড গভর্নেন্স বা প্রতিষ্ঠানগুলোর সুশাসন চর্চার ওপর ভিত্তি করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন