বেনাপোল সীমান্তে প্রতারণার শিকার সেই পাসপোর্টধারী স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু

২ সপ্তাহ আগে
বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতে সব নিরাপত্তা ব্যবস্থার নজর এড়িয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারকের কবলে পড়ে অর্থ খুইয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন পাসপোর্টধারীরা। এবার প্রতারণার শিকার হয়ে অর্থ হারিয়ে চিকিৎসা করাতে না পেরে দুশ্চিন্তায় জীবন হারিয়েছেন অবসর প্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ঢাকার মনোজ কুমার।

দীর্ঘদিন ধরে চিহ্নিত চক্রটি পাসপোর্টধারীদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে আসলেও তাদের কাছে যেন অসহায় সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রশাসন জেল হাজতে পাঠালেও বারবার ছাড়া পেয়ে প্রতারণার ফিরছে এসব অপরাধীরা।


সবশেষ গত ২১ ডিসেম্বর ভারতে যাওয়ার সময় এ চক্রটির প্রতারণার শিকার হয় ঢাকা কদমতলীর সারই মসজিদ রোড ধানিয়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মনোজ কুমার। মেয়ে অবন্তী করকে সঙ্গে নিয়ে গত শনিবার চিকিৎসার জন্য বেনাপোল বন্দরে এসেছিলেন। এ সময় চিহ্নিত ৫  ছিনতাইকারী পরিবহন স্টাফ পরিচয়ে  ইমিগ্রেশন সংলগ্ন ওয়ান ব্যাংকের এটিএম বুথের পাশে নিয়ে জিম্মি করে। পরে মেয়েকে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ৩৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় মনোজ কুমারের মেয়ে অবন্তী করের দায়ের করা এজাহারে ওই দিন পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত বেনাপোল পোর্টথানার বড় আঁচড়া গ্রামের গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে শোয়েব আক্তার, জাবের শেখের ছেলে শেখ রাহাদ অন্তর ও ইউসুফ আলীর ছেলে আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করে। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় ছিনিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার।


এ মামলায় এজাহারনামীয় ৫ জন ও অজ্ঞাতনামা ৭-৮ জনের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের হয়।  তবে ছিনতাই করা টাকা সব ফেরত না পাওয়ায় ভারতে চিকিৎসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এ শিক্ষকের। এ অবস্থায় দুশ্চিন্তায় পড়ে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে ঘটনার ২ দিন পর ২৪ ডিসেম্বর কলকাতায় মারা যায় মনোজ কুমার। ২৬ ডিসেম্বর বাবার মরদেহ নিয়ে দেশে ফিরে চেকপোস্ট এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানান ভুক্তভোগী অবন্তী কর।

 

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্ট বন্দর এলাকার চিহ্নিত ছিনতাইকারীদের মধ্যে আলোচিতরা হলো পোর্টথানার বড়আঁচড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে বাবু, শাহাজামালের ছেলে মারুফ, ছোটআঁচড়া গ্রামের দাউদ হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম হোসেন সাগর, সাদিপুর গ্রামের হারুনের ছেলে এবাদত।


এছাড়া বেনাপোল চেকপোস্টে চৌধুরী সুপার মার্কেটের রবি, সাইদুর সুপার মার্কেটের বাবুল, রেজাউল সুপার মার্কেটের হামিদ, ইউনুস সুপার মার্কেটে বরিশালের শামীম, রবি, হৃদয়, শিমুল, ইমরান ও মারুফ পেশাদার ছিনতাইকারী।


জানা যায়, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং রাষ্ট্রের ভারত গমনের প্রধান ফটক বেনাপোল চেকপোস্ট। এ পথে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার দেশি-বিদেশি লোক যাতায়াত করে থাকেন। আর ওইসব যাত্রীদের এক শ্রেণির ছিনতাইকারী লাইনের আগে অনলাইন ট্যাক্স, দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে কষ্ট করতে হবে না এসব প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে আসে তাদের নির্দিষ্ট ঘরে। তারপর অনলাইন ফর্মপূরণ এবং টাকার নাম্বার লিখতে হবে, না লিখলে কাস্টমস আটক করবে বলে নানাভাবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের বুঝিয়ে তাদের কাছে থাকা টাকা গুণতে গুণতে পাসপোর্টযাত্রীর অগোচরে ফেলে দেয় টেবিলের নীচে। এভাবে প্রতিনিয়ত সাধারণ এসব যাত্রীদের টাকা ছিনতাই করছে এই চক্রগুলো।


আরও পড়ুন: বেনাপোলে তিন বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগ বিএসএফের বিরুদ্ধে


দিনে-দুপুরে এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


ভারতগামী পাসপোর্টধারী নজরুল ইসলাম জানান, পাসপোর্টধারীদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বন্দর এলাকায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা কাজ করছে। এত নিরাপত্তার মধ্যে একটি চক্র প্রতিদিন পাসপোর্টধারীদের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়ে যাওয়ার ঘটনা দুঃখজনক।


বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি মশিয়ার রহমান জানান, সীমান্তে বিভিন্ন পরিচয়ে ছিনতাইকারীরা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে  ছিনতাইয়ের ঘটনা চালাচ্ছে। যা বেনাপোল বন্দর এলাকার ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করছে। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের কাছে প্রশাসনিক নিরাপত্তা বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।


বন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ জানান, পাসপোর্টধারী মনোজ কুমারের মরদেহ দেশে ফেরত এসেছে। প্রতারকচক্র দীর্ঘদিন ধরে চেকপোস্ট এলাকায় প্রতারণা চালিয়ে আসছে। এ বিষয়ে পাসপোর্টধারীদের সতর্ক করা হলেও তারা ফাঁদে পড়ছেন।


বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রাশেদুজ্জামান জানান, ওই পাসপোর্টধারীর সঙ্গে প্রতারণা করে যারা অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল তাদের ৩ জনকে সেদিনই গ্রেফতার করা হয়েছিল।  


প্রতারণা প্রতিরোধে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পাসপোর্টধারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশ এ চক্রের অনেককে গ্রেফতার করেছে এবং প্রতারকদের আস্তানায় তালাও ঝুলিয়েছে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন