বেত্রাঘাতের দায় ঢাকতে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রকে ‘চাঁদাবাজ’ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের

৫ দিন আগে
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে ছড়া খারাপ লেখার অজুহাতে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, দায় এড়াতে তিনি ওই শিশুকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে তার মাকে গালিগালাজও করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীর মা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগপত্রে আরও ২৪ জন অভিভাবকের স্বাক্ষর রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাছিন তালহা প্রতিদিনের মতো স্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাসে গিয়ে ছড়া অনুশীলনের অংশ হিসেবে ‘আমাদের ছোট নদী’ ছড়াটি লিখতে দেন। তালহা ছড়া লেখার সময় ছোট-বড় কিছু বর্ণ ভুল করায় এবং কথিত বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তাকে বেত্রাঘাত করেন। এতে শিশুটির পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।


এছাড়া একই দিন সমাবেশ চলাকালীন লাইন বাঁকা হওয়ার কারণে তালহা ও আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুনরায় শারীরিকভাবে শাস্তি দেন প্রধান শিক্ষক। স্কুল থেকে ফিরে তালহা তার মা তাসলিমা আক্তারকে পুরো ঘটনাটি জানালে তিনি স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে সন্তানের ওপর নির্যাতনের কারণ জানতে চান।


তাসলিমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন- ‘আপনার ছেলে এক মাস আগে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল।’ এছাড়া ছেলের হাতের লেখা খারাপ হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। এরপর তিনি আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে আমাকে গালিগালাজ করেন। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন শিশুশিক্ষার্থী কীভাবে চাঁদা চাইতে পারে, এমন কথা শুনে আমি হতবাক হয়ে যাই।


এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মনজুর ইসলাম কবির বলেন, 'প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সব সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। সামান্য ভুল করলেও শিশুদের মারধর করেন, এমনকি প্রশংসাপত্রের জন্যও নিয়ম বহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এই আচরণের কারণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।'


আরও পড়ুন: কোচিং সেন্টারে ছাত্রীর সঙ্গে অন্তরঙ্গে শিক্ষক অবরুদ্ধ, মোটরসাইকেলে আগুন


অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার না করে বলেন, 'হ্যাঁ, দ্বিতীয় শ্রেণির ওই শিক্ষার্থী এক মাস আগে আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় আমি তাকে শাসন করেছি। এটা ঠিক হয়নি, স্বীকার করছি। প্রশংসাপত্র তৈরির জন্য কম্পিউটার খরচ আদায় করি, তবে সেটা সবার কাছ থেকে নেয়া হয় না।'


তবে দ্বিতীয় শ্রেণির একজন শিশু শিক্ষার্থী কীভাবে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চাইতে পারে এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, 'হ্যাঁ, সে চেয়েছে।'


ঘটনার বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জানান, 'ঘটনাটি আমরা জেনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।'


এদিকে আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলম বলেন, 'একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।'

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন