বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকীতে মৌলভীবাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন

৪ সপ্তাহ আগে
আজ বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকী। ১৯৭১ সালের এই দিনে (২৮ অক্টোবর) মৌলভীবাজারের ধলই সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শহীদ হন তিনি।

মহান এই বীরের স্মৃতিতে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) নানা আয়োজনে মৌলভীবাজারে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।


১৯৭০ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সিপাহী পদে যোগ দেন হামিদুর রহমান। তবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চাকরি ছেড়ে মাতৃভূমির মুক্তির লড়াইয়ে যোগ দেন তিনি। ২৮ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল নিয়ে তিনি ভারত থেকে প্রবেশ করেন মৌলভীবাজারের ধলই সীমান্তে। লক্ষ্য ছিল— পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটি ধ্বংস করা। আক্রমণের ঠিক আগে শুরু হয় তীব্র গোলাগুলি। সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুর ব্যাংকারের মাত্র ১০ গজ দূরে গিয়ে হ্যান্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন হামিদুর রহমান। এতে শত্রুর মেশিনগান থেমে যায়। কিন্তু পরক্ষণেই আরেক ব্যাংকার থেকে ছোড়া গুলিতে শহীদ হন তিনি। ৩ নভেম্বর ধলই সীমান্ত মুক্ত হলে তার মরদেহ উদ্ধার করে সমাহিত করা হয়।


স্বাধীনতার দুই দশক পর, ১৯৯২ সালে বিজিবি ধলই সীমান্তে তার স্মরণে স্থাপন করে নামফলক স্মৃতিস্তম্ভ। পরে ধলই চা বাগানের সংলগ্ন এলাকায় ৭৪ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। এখানেই রয়েছে স্মৃতিজাদুঘর ও আর্কাইভ, যেখানে সংরক্ষিত আছে তার শৈশবের ছবি, পারিবারিক তথ্য ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।


প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, বিজিবি এবং স্থানীয় মানুষ।


কমলগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা আরশাদ মিয়া বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের বীরত্বে আমরা গর্বিত। প্রতি বছর আমরা শ্রদ্ধাভরে তাকে স্মরণ করি।’


আরও পড়ুন: জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিক তুরাবের কবরে সারওয়ার আলমের শ্রদ্ধা


স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ঝুনু লাল দে ধলই স্মৃতিসৌধের আরও উন্নয়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘এই স্থানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বহন করছে, তাই এর যত্ন নেয়া জরুরি।’


ধলই স্মৃতিসৌধ, জাদুঘর ও আর্কাইভের পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা মো. মাসুদ বলেন, ‘এই কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। প্রতিদিন এখানে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করি ও পর্যটকদের কাছে বীরশ্রেষ্ঠের জীবনকথা তুলে ধরি।’


ধলই বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মো. আক্কাস আলী জানান, স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘরের যাবতীয় দেখাশোনা বিজিবি করছে এবং প্রতি বছর শাহাদৎবার্ষিকীতে তারা শ্রদ্ধা নিবেদন করে।


মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ছিলেন দেশের সর্বকনিষ্ঠ বীরশ্রেষ্ঠ। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন