ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ছায়ায় যখন বৈশ্বিক অর্থনীতি অনিশ্চয়তায়, তখন কৌশল বদলে দিল্লির দিকে হাত বাড়াচ্ছে বেইজিং। সীমান্ত বিরোধ, বাণিজ্য ঘাটতি আর ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও সোমবার (১৮ আগস্ট) নয়াদিল্লি সফরে যান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেইজিং-নয়াদিল্লি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয় বরং অংশীদার হিসেবে দেখা উচিত। দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সুবিধার ভিত্তিতে সহযোগিতা জোরদারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন দুই নেতা।
জয়শঙ্করের পাশাপাশি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতের পর পাকিস্তানে যাবেন তিনি।
আরও পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্র-চীনের শুল্কবিরতি বাড়ল আরও ৯০ দিন
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ চীন-ভারত সম্পর্কের মূল অন্তরায়। লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা নিয়ে সংঘর্ষে বহুবার উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ২০২০ সালের গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ দুই দেশের বিশ্বাসঘাটতিকে আরও গভীর করে। একই সঙ্গে ভারতীয় বাজারে চীনা পণ্যের প্রভাব ও নয়াদিল্লির আমদানি-ভিত্তিক ঘাটতি অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও জটিল করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক পর্যায়েও দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্পষ্ট। ভারত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গড়া কোয়াড জোটে সক্রিয় থাকায় বেইজিং সন্দেহপ্রবণ। আবার চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগে ভারত যোগ না দেয়ায় আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্পেও বিভক্তি তৈরি হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে পাকিস্তানের সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠতাও দিল্লির জন্য দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা দুশ্চিন্তা।
তবে সাম্প্রতিক বৈঠকে সহযোগিতার ইঙ্গিত মিলছে। উভয় দেশ সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা কমাতে যৌথ সমন্বয় মেকানিজম গঠনের আলোচনা করেছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়েও প্রস্তাব উঠেছে। কৃষি, অবকাঠামো ও জ্বালানি প্রকল্পে পারস্পরিক বিনিয়োগের পথ খুলতে চায় বেইজিং।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধ চীনের জন্য নতুন বাজার খোঁজার চাপ তৈরি করেছে। অন্যদিকে ভারতও ওয়াশিংটনের অতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থনৈতিক বিকল্প চায়।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণায় কড়া প্রতিক্রিয়া ভারতের
এই প্রেক্ষাপটে সম্পর্ক জোরদার উভয় দেশের জন্যই কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনতে পারে। যদিও সীমান্ত বিরোধ ও পারস্পরিক অবিশ্বাস দূর না হলে সম্পর্ক টেকসই অগ্রগতির পথে হাঁটতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।
]]>