বিনা পয়সায় ১৮ বছর শোক সংবাদ প্রচার করছেন মুছা

৪ সপ্তাহ আগে
চলতি পথে আমাদের কানে প্রায়ই ভেসে আসে কারো চিরতরে চলে যাওয়ার খবর। বিষাদের কণ্ঠে তা মুহূর্তেই ভারাক্রান্ত করে হৃদয়। মৃত্যুর এমন সংবাদ পুরো এলাকায় ঘুরে মাইকিংয়ের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়ার দায় নিয়েছেন সালেহ মুছা (৪২)। কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই ১৮ বছর ধরে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে সবারই চিরচেনা সালেহ মুছার কণ্ঠ। প্রতিদিনই কারো না কারো মৃত্যু সংবাদ জানান দেন তিনি। পরিচিত এই কণ্ঠ দূর থেকে শুনতে পেলেই সবাই সহজেই বোঝেন কারো না কারো মৃত্যুর বার্তা এটি। তার কণ্ঠের মায়াবী টান সবাইকে নিজের মৃত্যুর কথাই যেন স্মরণ করিয়ে দেয়।  

 

প্রতিনিয়ত তার কণ্ঠ শোনা অনেকেই জানতে চান কে এই ব্যক্তি যে কিনা সবসময়ই এমন খবর পৌঁছে দেন? এটা কি তার কোনো পেশা?  

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদরের পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সালেহ মুছা। পেশায় তিনি একজন রিকশাচালক। তবে কণ্ঠ ভালো থাকায় কারো মৃত্যু হলে সেই খবর পৌঁছে দেয়ার জন্য ডাক পড়ে তার।

 

আরও পড়ুন: দুর্নীতির খবর প্রচারে স্বাধীনতা চান সাংবাদিকরা

 

গত ১৮ বছর ধরে মাইকিং করে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি। এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক মানুষের মৃত্যুর সংবাদ এলাকাজুড়ে প্রচার করেছেন তিনি। তবে এর বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক নেননি তিনি। কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে হাসিমুখে নেন।

 

মৃত্যু সংবাদ প্রচারের অনুভূতি নিয়ে সালেহ মুছা বলেন, ‘আমি মাইকে যখন মৃত্যু সংবাদ প্রকাশ করি তখন আমার মধ্যেও স্বজন হারানোর বেদনা অনুভূত হয়। নিজের মৃত্যুর কথাও স্মরণ হয়। ভাবতে থাকি আমার মৃত্যু হলেও কেউ এভাবে বলে যাবে। আমার মনে হয় কারো মৃত্যু সংবাদ বলতেই বলতেই আমার মৃত্যু হতে পারে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে যখন মৃত ব্যক্তি অল্প বয়সের বা কোনো দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। তখন নিজেকে মানিয়ে রাখতে পারি না, অঝোরে পানি ঝরতে থাকে চোখ দিয়ে।’

 

শুরুটা কীভাবে জানতে চাইলে মুছা বলেন, ‘২০০৬ সালে সর্বপ্রথম একদিন মাইকে শোক সংবাদ প্রচার করি। এর পর থেকে কারো মৃত্যু হলে আমাকে ডাকেন সবাই। সেই যে শুরু আর থামিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এটি করে যাব।’

 

আরও পড়ুন: বিনা পারিশ্রমিকে সাড়ে ৮০০ মসজিদে তারাবি পড়ান তারা

 

মুছার প্রতিবেশী  আবু কালাম বলেন, 'মুছা রিকশা চালালেও অত্যন্ত প্রতিভাবান এক ব্যক্তি। তিনি মঞ্চে উপস্থাপনা, নাটক, যাত্রাপালায় অভিনয়ও করেন। মধুর কণ্ঠে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রয়েছে তার। মানুষের বিপদে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে এগিয়ে আসেন। অর্থকষ্টে থাকলেও তা বুঝতে না দিয়ে বরং মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। তার মতো মানুষই সমাজে প্রয়োজন।’


স্থানীয় বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এলাকার প্রায় সবার মোবাইলে তার নম্বরটি সেইভ করা থাকে। কারণ মৃত্যু তো আর বলেকয়ে আসে না। মুছা ভাই তার জীবনটা কাটিয়ে দিলেন ‘একটি শোক সংবাদ’ প্রচার করতে করতে। এটাই তার স্বকিয়তা।’

 

এলাকাবাসী জানান, সালেহ মুছার কণ্ঠে শোক সংবাদ শুনতে শুনতে তারা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। এই মানুষটির কণ্ঠ সবাইকে এক ভিন্ন আবহে নিয়ে যায়। তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন তারা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন