সোমবার (২১ এপ্রিল) পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের যৌথ বৈঠক থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে গাজায় ইসয়ারায়েলি হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনের সময় সাম্প্রতিক সময়ে ভাঙচুরের শিকার ছয়টি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার আনুষ্ঠানিক ফেসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে এসব তথ্য জানিয়েছে তার প্রেস উইং। বিডা চেয়ারম্যান ও আইজিপির যৌথ সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-নেসলে বাংলাদেশ, কোকাকোলা বাংলাদেশ বেভারেজেস, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, বাটা সু কোম্পানি, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, পেপসিকো এবং জুবিলেন্ট ফুড ওয়ার্কস বাংলাদেশসহ প্রধান বিদেশি কোম্পানিগুলোর নির্বাহীরা।
গত ৭ থেকে ৮ এপ্রিল দেশের বেশ কয়েকটি শহরে এসব প্রতিষ্ঠানের স্থাপনায় ভাঙচুর, লুটের মতো ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, এসব ঘটনায় অন্তত ১৪০ জনকে গ্রেফতার এবং প্রায় এক ডজন মামলা করা হয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, ‘একই ছাদের নিচে আইজিপিসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে এই বৈঠক কেবল সময়োপযোগীই নয়, বরং নজিরবিহীনও বটে। এটি কেবল একটি প্রতীকী উদ্যোগ নয়, এটি একটি শক্ত বার্তা-বাংলাদেশ তার বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে, বিশেষত প্রতিকূলতা দেখা দিলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদের অধিকারকে সম্মান করি, কিন্তু যে প্রতিষ্ঠানগুলো হাজারো মানুষের জীবিকা, স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করে-সেগুলো ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয়।’
এসময় ভাঙচুর ও লুটপাটে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকারের প্রশংসা করেন আশিক চৌধুরী।
বৈঠকে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা লুটপাট, ভাঙচুরে তাদের ক্ষয়ক্ষতি ও কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার চিত্র তুলে ধরেন। এর প্রতিক্রিয়া আইজিপির কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয় যে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য জরুরি বিশেষ যোগাযোগের লাইন খোলা হবে।
আরও পড়ুন: গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে বাতিল ১০ অর্থনৈতিক অঞ্চল: বিডা চেয়ারম্যান
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, এতে করে প্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তাজনিত যেকোনো ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে ও দ্রুত সহায়তা পেতে পারবে।
ব্যবসায়ী নেতাদের আইজিপি বাহারুল আলম দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিক্রিয়া জানাতে আসিনি, বরং স্থায়ী আস্থার ভিত্তি গড়তেই এখানে এসেছি।’
নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল, র্যাপিড রেসপন্স ইউনিট এবং উন্নত সংকট-যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সম্মিলিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয় বৈঠকে। এসব উদ্যোগ বিডা, বাংলাদেশ পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস। যার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশে আস্থা ও অদম্যতা ধরে রাখা।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই আলোচনা ছিল প্রতিক্রিয়া নয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের একটি পথচলা। সরকারের অঙ্গীকার হলো-শুধু ভালো সময় নয়, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিনিয়োগকারীদের পাশে থাকা।’
সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক সাড়া ও দায়িত্বশীল অবস্থানের প্রশংসা করেন প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা এবং বাংলাদেশে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া ও ভবিষ্যতে ব্যবসা সম্প্রসারণের আগ্রহের কথা জানান।
বিডার বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ এই উদ্যোগ, যার লক্ষ্য-বাংলাদেশকে একটি নিরাপদ, টেকসই ও বিনিয়োগ-বান্ধব গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে।