মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবের অনুসারীদের মহড়া ও মিছিলে সভা পণ্ড হয়ে যায়। এতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় ক্যাম্পাসে। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনীতিক পটপরিবর্তনের পর বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি করা হয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ূবের মনোনিত প্রার্থী ও তার ভাগ্নে আসাদুজ্জামানকে।
গত ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজের পরিদর্শকের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে আসাদুজ্জামানের মনোনয়ন পরিবর্তে সভাপতি করা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নূরে আলম সিদ্দিকীকে। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন আজ মঙ্গলবার বর্তমান সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে পরিচিত সভার আহ্বান করেন। এতে ক্ষুব্ধ হন টিএস আইয়ূবের অনুসারী বিএনপি নেতারা।
আরও পড়ুন: অবশেষে ভুল বুঝলেন তিনি
সোমবার রাত থেকেই শিক্ষক প্রতিনিধি, এডহক কমিটির অন্য সদস্যরা ও অধ্যক্ষকে হুমকি দিতে থাকেন। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার সকাল থেকেই কলেজ এলাকায় অবস্থান নেন। কলেজ চত্বরে দফায় দফায় মিছিল করেন।
এ দিকে বিএনপি নেতাদের হুমকিতে কলেজের অধ্যক্ষ ও এডহক কমিটির অন্যান্য সদস্যরা অনুপস্থিত ছিলেন। তবে পুলিশ প্রহরায় কলেজে প্রবেশ করেন নতুন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী। কিন্তু সভা করতে পারেননি।
নতুন সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘কলেজের পক্ষ থেকে ৩১ ডিসেম্বর এডহক কমিটির পরিচিত সভার আহবান করা হয়। কিন্তু সোমবার থেকে টিএস আইয়ুব কলেজের অধ্যক্ষ, কমিটির অন্য সদস্যদের ও পুলিশ প্রশাসনকে হুমকি দিয়েছেন। ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব কমিটির হুমকি দেয়ায় মিটিংয়ে সদস্যরাসহ অধ্যক্ষ উপস্থিত হননি। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বিএনপি ও ছাত্রদলসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কলেজ চত্বরে মিছিল করেন। এমন কি আমি আমার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কলেজে ঢুকতে চাইলে সেখানে কর্মচারীরা গেট খুলেও সহযোগিতা করেননি।’
আরও পড়ুন: বিএনপি থেকে আ.লীগে যাওয়া শাহজাহান ওমরের নামে আরও মামলা
এ বিষয়ে অবশ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব বলেন, ‘নুরে আলম সিদ্দিকী যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা ও বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এর সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। অধ্যক্ষসহ কমিটির অন্য সদস্যদের অনুপস্থিতির দায় কেন আমার ওপর আসবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘নূরে আলম বাইরের লোক। তার কোনো রাজনীতিক ও সামাজিক অবস্থান নেই। তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের পদটা অপব্যবহার করে সভাপতির পদটা বাগিয়ে নিয়েছেন। এটা অনৈতিক। বাঘারপাড়ার লোক সংগ্রাম করবে, আর উনি বাইরের লোক হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবে, এটা মেনে নেয়া যায় না।’
কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিনকে কয়েক দফা ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি।
আরও পড়ুন: ‘সাংবাদিকদের বাপ ডাকিয়ে দেব’, বিএনপি নেতার বক্তব্যে প্রতিবাদের ঝড়
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইএনও) শোভন সরকার বলেন, ‘মঙ্গলবার বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে এডহক কমিটির প্রথম সভা আহবান করা হয়েছিলো। বাধা দেয়ায় সভা হয়নি। তবে কারা বাধা দিয়েছে সেটা জানি না। গোলযোগের আভাস পেয়েছিলাম। তাই আগে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।’
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম বলেন, ‘কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে কলেজে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে; এমন খবর পেয়ে পুলিশের মোবাইল টিম ঘটনাস্থলে যায়।’