বাগেরহাটে বেপরোয়া বেওয়ারিশ কুকুর, ১৫ দিনে ১০২ জনকে কামড়

৩ সপ্তাহ আগে
বেওয়ারিশ কুকুর হিংস্র হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের ফকিরহাটে। রাস্তাঘাটে আক্রমণে আহত হচ্ছে মানুষ, গরু, মহিষ সহ বিভিন্ন গবাদিপশু। টেনে হিঁচড়ে খেয়ে ফেলছে ছাগল, ভেড়া, খরগোস, হাঁস-মুরগির মতো ছোট প্রাণি। দলবদ্ধ আক্রমণে জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।

ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে, গত ১৫ দিনে কুকুর ও বিড়ালের আক্রমণে আহত হয়ে ১০২ জন ব্যক্তি জলাতঙ্কের সরকারি (র‌্যাবিস ভ্যাকসিন) টিকা নিয়েছেন। সরকারি এ হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ৭ জন আহত ব্যক্তি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে আসেন। গত দেড় বছরে এখান থেকে ২ হাজার ৫৯ জন আহত ব্যক্তি ৬ হাজার ১৭৭ ডোজ সরকারি র‌্যাবিস ভ্যাকসিন টিকা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. কামাল হোসেন।


তবে উপজেলায় কুকুর ও বিড়ালের মাধ্যমে আক্রান্ত আহত ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকারি হাসপাতাল ছাড়াও বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধনী ব্যক্তিরা টিকা কিনে ব্যবহার করেন। এছাড়া আক্রান্তের একটি বড় অংশ টিকা না নিয়ে গ্রাম্য ফকিরদের দিয়ে টোটকা চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক করাচ্ছেন। মানুষের বাইরেও প্রতিদিন গবাদি পশু কুকুরের কামড়ে আহত হচ্ছে। অনেকে আক্রান্ত পশু টিকা দিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: চিকিৎসাসেবা / পঞ্চগড়ে বিপাকে কুকুরের কামড়ে আহতরা

সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও উপজেলায় আনুমানিক ৫ থেকে ৬ হাজার কুকুর আছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার কাটাখালী মোড়, মূলঘর, বাহিরদিয়া, আট্টাকী, হাউজবিল্ডিং, ফকিরহাট বাজারের আশপাশে সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গড়ে ৫টি থেকে ১৫টি পর্যন্ত কুকুর জোটবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। ব্যাগে খাবার জাতীয় কিছু দেখলে এসব কুকুর তেড়ে আসে। তাছাড়া স্কুলগামী শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা অহরহ কুকুরের আক্রমণের মুখে পড়ছেন। ফলে তাদের চলাফেরায় বাড়তি সতর্কতা লক্ষ করা গেছে।



উপজেলার পাগলা শ্যামনগর, ছোট হুচলা, টাউন নওয়াপাড়া গ্রামে সম্প্রতি দলবদ্ধ বেওয়ারিশ কুকুর একাধিক ছাগল ও হাঁস-মুরগি মেরে খেয়ে ফেলেছে বলেও শোনা গেছে।  কুকুরের কামড়ে আহত অনেক গবাদিপশুকে চিকিৎসা দিয়েছেন বলে জানান গ্রাম্য পশু চিকিৎসক খান আরিফ।


জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা সামিহা (৮) এর মা রেবেকা খাতুন জানান, স্কুলে যাওয়ার পথে কুকুর আক্রমণ করলে পথচারীরা দৌড়ে এসে রক্ষা করেন। ততক্ষণে কুকুরের আছড়ে পা দিয়ে রক্তপাত হয়। ডাক্তারের পরামর্শে দেওয়ার জন্য এসেছেন। তার মতো অনেক শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা এসব হিংস্র কুকুরের আক্রমণে আহত হচ্ছেন।


এসব দলবদ্ধ হিংস্র কুকুরের বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন উপজেলার সচেতন মহল।

আরও পড়ুন: ভৈরবে পাগলা কুকুরের কামড়ে আহত ৩৩

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান জানান, প্রাচীনকাল থেকে মানুষের পাশে সহাবস্থানের ফলে কুকুর স্বভাবতই মানুষের ক্ষতি করে না। কিন্তু হঠাৎ তাদের বন্য কুকুরের মতো হিংস্র আচরণের পিছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ থাকতে পারে। কুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি, উচ্ছিষ্ট খাদ্যের অভাব, আশ্রয়স্থানের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা, শিয়ালের কামড়ে র‌্যাবিস ভাইরাসের সংক্রমণসহ নানা কারণে হিংস্র হয়ে উঠছে রাস্তায় থাকা মালিকবিহীন কুকুর। বর্তমানে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী রেবিস টিকার চাহিদা বেড়েছে।


ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, ‘শহরে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে কুকুরের নিয়ন্ত্রনে কোনো সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ নেই। তবে উপজেলাবাসীর নিরাপত্তার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। এছাড়া রাস্তাঘাটে শিশু ও বৃদ্ধদের চলাচলের সময় সচেতনতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন