প্রতিবেদন মতে, ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করেন এই তিন তরুণী। তবে ‘বেআইনিভাবে’ মিছিল করার অভিযোগে তাদের আটক করে বিচারের আওতায় আনা হয়।
বিচারক তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার বিচারক এক রায়ে বলেন, ‘তাদের কর্মকাণ্ড অভিযোগের জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেনি।’
মুক্তি পাওয়ার পর তিন তরুণীর একজন বিবিসিকে বলেন, খালাস পাওয়ার বিষয়টি তার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। বিষয়টি সিঙ্গাপুরের অধিকারকর্মীদের ‘শক্তি যোগাবে এবং আশাবাদী করে তুলবে’।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি ‘প্রত্যাশার চেয়েও ভালো চলছে’: জেডি ভ্যান্স
সিঙ্গাপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ অস্বাভাবিক ঘটনা। বিক্ষোভের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর নিয়ম রয়েছে এবং কোনো কারণে সমাবেশের জন্য আগে পুলিশের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কর্তৃপক্ষ ইসরাইল-গাজা যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত জনসমাবেশকেও নিষিদ্ধ করেছে।
এসব বিধিনিষেধের ব্যাপারে সরকারের যুক্তি হলো, দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বিক্ষোভ সংক্রান্ত নিয়মকানুন দরকার। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই নিয়মগুলো মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নাগরিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিধিনিষেধ সত্ত্বেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গাজায় ইসরাইলের গণহত্যার প্রতিবাদে সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের পাশে পুলিশের অনুমতি ছাড়া একটি পদযাত্রা আয়োজন করেন সামাজিক সংগঠক মোসাম্মদ সাবিকুন নাহার এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটর সিতি আমিরাহ মোহাম্মদ আসরোরি। তাদের সহায়তা করেন আরেক সামাজিক সংগঠক কোকিলা আন্নামালাই।
সেই পদযাত্রায় প্রায় ৭০ জন তরুণ-তরুণী অংশ নেন। তাদের এই পদযাত্রার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাতে দেখা যায়, পদযাত্রায় তারা ফিলিস্তিনি প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে তরমুজের মতো রং করা ছাতা বহন করছেন।
আরও পড়ুন: ইসরাইলি নির্যাতনের শিকার ফিলিস্তিনি / ‘জ্ঞান ফেরার পর বুঝতে পারি আমি অন্ধ হয়ে গেছি’
রাষ্ট্রীয় আইনজীবীরা বিনা অনুমতিতে নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকায় মিছিল আয়োজন করার জন্য আয়োজক তিন তরুণীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এরপর তাদের বিচার শুরু হয়।
তাদের বিচারের সময় আসামিপক্ষ যুক্তি দেয় যে, তারা জানতেন না যে প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের আঙিনায় তাদের মিছিলের পথটি একটি নিষিদ্ধ এলাকা ছিল। তারা জনসাধারণের চলাচল করা রাস্তা ধরে পদযাত্রা করেছিলেন।
অবশেষে আদালত তিন তরুণীর পক্ষে রায় দিলেন। বিচারক বলেছেন, যদিও তরুণীরা পদযাত্রাটি আয়োজন করেছিলেন, তবে তারা ‘জানতেন না’ যে ইস্তানার চারপাশের রাস্তাটি একটি সংরক্ষিত এলাকা।
বিচারক উল্লেখ করেন, তারা একটি সাধারণ ফুটপাত ব্যবহার করেছিলেন এবং সেখানে কোনো নিষেধাজ্ঞার চিহ্ন ছিল না। বিচারক মন্তব্য করেন, ‘প্রমাণ থেকে স্পষ্ট, তারা তিনজনই আইন ভাঙা থেকে নিজেদের বিরত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলেন।’
আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতির পর ৮০ বার চুক্তি লঙ্ঘন, ৯৭ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরাইলের
খালাস পাওয়ার পর অধিকারকর্মী কোকিলা আন্নামালাই বিবিসিকে বলেন, এই অপ্রত্যাশিত রায় সিঙ্গাপুরের অধিকারকর্মীদের মধ্যে ‘নতুন শক্তি এবং আশা’ জাগিয়ে তুলবে। তিনি আরও বলেন, তারা সাজার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন এবং খালাস পাওয়াটা ‘আশ্চর্যজনক’। তিনি আরও যোগ করেন, ‘প্রথমত, আমাদের অভিযুক্তই করা উচিত হয়নি।’
দোষী সাব্যস্ত হলে এই তিন তরুণীর প্রত্যেকের ১০ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার পর্যন্ত জরিমানা বা ছয় মাসের কারাদণ্ড হত। এ মামলাটি সিঙ্গাপুরে ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। আদালতে শুনানিতে ফিলিস্তিনি পতাকার রঙে পোশাক পরে এবং কেফিয়াহ স্কার্ফ পরে এই তিন তরুণীর উপস্থিতি অনলাইন জগতে ভাইরাল হয়।
সিঙ্গাপুরের প্রসিকিউটর অফিস জানিয়েছে যে তারা আপিল করবে।
আরও পড়ুন: আবারও প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের ঘোষণা নেতানিয়াহুর
সিঙ্গাপুর সরকার ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করে আসছে এবং জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদকে সমর্থন করেছে। গত সেপ্টেম্বরে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে ‘যখন এর একটি কার্যকর সরকার থাকবে যারা ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করবে এবং স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদকে ত্যাগ করবে’।
]]>
৪ সপ্তাহ আগে
৭







Bengali (BD) ·
English (US) ·