ফরিদপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা, উপড়ে ফেলা হলো চোখ

৩ সপ্তাহ আগে
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরে ওবায়দুর রহমান খান (৩২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে, পিটিয়ে ও চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বিকেলে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী খায়রুজ্জামান ওরফে খাজা ও তার বাহিনী ওই যুবকের ওপর হামলা করে। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান। ওবায়দুর রহমান সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামের বিল্লাল খানের ছেলে।


ওবায়দুর রহমানের বড় ভাই রাজীব খান বলেন, ‘আমার ভাইকে সন্ত্রাসী খাজা ও তার বাহিনী খুন করেছে। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। গত ৫/৬ মাসে খাজা কানাইপুর বাজার ও আশপাশের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। সেই টাকার গরমে আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে খাজা বাহিনী।’

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে শিঙাড়া খাওয়া নিয়ে মারামারি, আহত ২০

রাজীব বলেন, ‘শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে কানাইপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে মমতাজ ফিলিং স্টেশনে মোটর সাইকেলে তেল নিতে গেলে সেখান থেকে অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলে আমার ভাইকে তুলে নিয়ে যায় খাজা বাহিনী। সে সময় তার বাহিনীর নাজমুল, রাসেল, জাহিদ, মুরাদ, রেজাউল, নিজাম, রাশেদসহ ১২/১৪ জন ছিলেন। এসময় আমার ভাইয়ের মোটর সাইকেলটিও নিয়ে যায় তারা।’


তিনি বলেন, ‘তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে আমার ভাইকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। ঘণ্টাখানেক পর জানতে পারি আমার ভাইকে কে বা কারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের চোখ খুঁচিয়ে উপড়ে ফেলছে। একটি পা ভেঙে দিয়েছে।’ 


পরবর্তীতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাত ৭টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করলে পথিমধ্যে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ভাই মারা যায় বলে জানান রাজীব।  


তিনি জানান, খাজা ও তার বাহিনী কানাইপুর এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজি করেন। তাকে সকলেই সন্ত্রাসী হিসেবেই চিনে। তার নিজস্ব বাহিনী রয়েছে। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।


তিনি আরও বলেন, ‘খাজার অপকর্ম আমার ভাই পুলিশকে কয়েকবার জানিয়েছিল। খাজা এখনও মাদক ব্যবসা করে যে কারণে আমার ভাইকে সমস্যা মনে করতো। আমার ভাইকে সে তার বশে নিতে পারছিল না। তাছাড়া অন্য কারণ আছে কিনা তা এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। এ কারণেই আমার ভাইকে খাজা হত্যা করেছে।’


ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোছা. তাহিরা জানান, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তার মাথার স্কালপে হেমাটোমা, চোখে মারাত্মক আঘাতে রক্তক্ষরণ হয়। এছাড়া বাম পা ভাঙাসহ শরীরে আরও ইনজুরি ছিল। এজন্য তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।


ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদউজ্জামান বলেন, ওই যুবক সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পথিমধ্যে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই যুবকের ভাই।

আরও পড়ুন: ফরিদপুরে পাট বাজারে অভিযান, জরিমানা-গুদাম সিলগালা

প্রসঙ্গত, খায়রুজ্জামান ওরফে খাজা দীর্ঘ ২০ বছর ফরিদপুরের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা কানাইপুরসহ আশপাশের অঞ্চলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছিল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে।


খাজা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে আসছিল। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর তার ভাই সাবেক বিএনপি নেতা কানাইপুরের বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেনের প্রভাব খাটিয়ে কানাইপুরের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করে আসছিল।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন