ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীকে মারধরে তিন মামলা, ওসি প্রত্যাহার

৪ দিন আগে
ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষাকে (১৮) মারধরের ঘটনায় নগরকান্দা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলায় বাদী হয়েছেন বৈশাখী ইসলাম বর্ষা। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানা পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলায় ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী নেত্রীর ওপর হামলার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফর আলীকে। শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার এ আদেশ দিয়েছেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. শামসুল আজম।


তিনি জানান, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে থানা থেকে ফরিদপুর পুলিশ লাইনস-এ সংযুক্ত করা হয়েছে।


এ ঘটনায় রাজনৈতিক দিক নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠলেও দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন মারধরের শিকার নেত্রীসহ বৈষম্যবিরোধীর নেতারা। বৈশাখী ইসলাম বর্ষা নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামের সাবু শেখের মেয়ে। সে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।


ছোট বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় শুক্রবার (৩০ মে) বিকেলে তার ওপর হামলা চালায় স্থানীয় সেকেন কাজী ও তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন। তার চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় বলে জানিয়েছেন। তখন পুলিশের ওপরও হামলা চালায় উত্তেজিতরা। এর প্রতিবাদে সেখানে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধীর নেতারা। তখন তাদেরকে ধাওয়া দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় তারা।


এ ঘটনার পর বৈশাখী ইসলাম বর্ষা জানান, গত কয়েকদিন ধরে বৈশাখীর ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল স্থানীয় জালাল বেপারীর ছেলে শরিফ বেপারী। এর প্রতিবাদে থানায় অভিযোগ করলে ওই এলাকায় থানা পুলিশ ছুটে যায়। এ সময় উত্ত্যক্তকারী যুবককে পুলিশ আটক করলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। এ সময় শরীফ বেপারীর পক্ষ নিয়ে সেকেন কাজী ও তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন মিলে মারধর করেন।


তিনি বলেন, হামলাকারীরা সকলে বর্তমানে বিএনপির রাজনীতি করেন এবং উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার সমর্থক। ফেসবুক লাইভে ও একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিএনপি হামলা করেছে বলে তুলে ধরেন।


বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলাকারী সেকেন কাজী ও সাগর কাজী আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেনের সমর্থক ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার সমর্থক পরিচয় দেন। এছাড়া বদিউজ্জামান তারা মোল্যাসহ বিএনপির নেতাদের ছবি সংবলিত বিভিন্ন ফেস্টুন দেখা যায় সাগর কাজীর।


আরও পড়ুন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীকে মারধর, মহাসড়ক অবরোধ


এদিকে শনিবার (৩১ মে) দুপুরে বর্ষার বাড়িতে ছুটে উপজেলা বিএনপির নেতারা। তখন নেতাদের উপস্থিতিতে বর্ষা তাদের বলেন, হামলাকারীরা যে দলেরই হোক বিচার করতে হবে। বিএনপির বা আওয়ামী লীগের হলেও বিচার করতে হবে।


তখন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যা দাবি করেন হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কর্মী। তিনি বলেন, হামলাকারীদের কেউ যদি বলতে পারে বিএনপির লোক আমার যে শাস্তি হয় মেনে নেব। হামলাটা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা করেছে।


নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত শরীফ বলেন, বিএনপিকে দায়ী করার জন্য মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বিএনপির কেউ এঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেলের অতিরিক্ত দায়িত্বরত) আসিফ ইকবাল জানান, এ ঘটনায় নগরকান্দা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলায় বাদী হয়েছেন বৈশাখী ইসলাম বর্ষা। এছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানা পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এসব মামলায় উত্ত্যক্তকারী শরিফ বেপারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন