বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সমাজসেবী সংগঠন ‘মাইজভান্ডারী শাহ এমদাদিয়া ব্লাড ডোনার্স গ্রুপ’-এর আয়োজনে ‘বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতাল, ঢাকা’ এবং ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ফটিকছড়ি মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফে দিনব্যাপী এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়।
কর্মসূচির মধ্যে ছিল রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, বিনামূল্যে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা (হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষা) এবং থ্যালাসেমিয়া সচেতনতামূলক সেমিনার। সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া কর্মসূচিতে এক হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী, যুবক, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী ও বিভিন্ন পেশার সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে থ্যালাসেমিয়া বিষয়ক গবেষণার জন্য ৩৬৪টি স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলনের উপর গুরুত্বারোপ করে বক্তারা বলেন, এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ফটিকছড়িতে স্বাস্থ্য সচেতনতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই ধরনের কার্যক্রম প্রতিটি উপজেলায় ছড়িয়ে দিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থ্যালাসেমিয়ার অভিশাপ থেকে রক্ষা পাবে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে চবিতে মানববন্ধন
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, ‘তরিকতের মূল শিক্ষাই হলো মানবসেবা ও আত্মশুদ্ধি। একজন প্রকৃত তরিকতপন্থি শুধু আত্মার পরিশুদ্ধিতেই মনোযোগী হন না, বরং সমাজ ও মানবতার কল্যাণেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। থ্যালাসেমিয়ার মতো একটি প্রতিরোধযোগ্য রক্তরোগ সমাজে সচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত নতুন জীবনকে দুর্ভোগে ঠেলে দিচ্ছে। তাই আমাদের তরিকত চর্চার পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি স্তরে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে হবে। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করানো যেমন একটি বৈজ্ঞানিক দায়িত্ব, তেমনি এটি একটি আধ্যাত্মিক দায়বোধও বটে। আমরা যদি এ বার্তাটি তরিকার মাধ্যমে জনমনে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়ার মতো দুরারোগ্য দুর্ভোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারব।’
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. এম. এ. খান উল্লেখ করেন, ‘থ্যালাসেমিয়া একটি জেনেটিক বা বংশগত রক্তরোগ, যা মূলত দুইজন ক্যারিয়ার বাবা-মায়ের মাধ্যমে সন্তানে স্থানান্তরিত হয়। এটি কোনো ভাইরাস বা সংক্রামক রোগ নয়, কিন্তু সচেতনতার অভাবে এই রোগে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ, সহজ একটি রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে বিয়ের পূর্বেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে, যাতে প্রতিটি নাগরিক থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানে, সচেতন হয় এবং দায়িত্ববান সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।’
প্রধান অতিথি ইঞ্জিনিয়ার এম এ মতিন বলেন, ‘মানবসেবা হচ্ছে ইসলামি আদর্শের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। থ্যালাসেমিয়ার মতো সামাজিক রোগ প্রতিরোধে আমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের কর্মসূচি শুধু রোগ প্রতিরোধে নয়, একটি স্বাস্থ্যসম্মত জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
আরও পড়ুন: মহাখালীতে খোলা হলো হিটস্ট্রোক সেন্টার, বিনামূল্যে মিলবে সেবা
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. আদনান মান্নান, পিটুপি হেলথ কেয়ারের হিস্টোপ্যাথলজি ও সাইটোপ্যাথলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. তারেক আল নাসির, ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক ড. এ. কে. এম. একরামুল হাসান স্বপন, চিটাগাং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুল আচফিয়া, বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. কবিরুল ইসলাম, ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালটেন্ট (শিশু স্বাস্থ্য) ডা. মো. জয়নাল আবেদীন মুহুরী।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন শান্তা হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, শাহজাদা সৈয়দ এরহাম হোসাইন এবং ডা. প্রীতি বড়ুয়া।
]]>