প্লাস্টিকের ভয়াবহ এই দূষণ প্রতিরোধে ভিন্নধর্মী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যানন্দ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। যার মাধ্যমে কক্সবাজারকে প্লাস্টিকমুক্ত করার পাশাপাশি প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাদ্যসামগ্রী প্রদানের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ।
এরই মধ্যে গেল ৩ বছরে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে ৩ লাখ কেজিরও বেশি সামুদ্রিক প্লাস্টিক সংগ্রহ ও রিসাইকেল করেছে বিদ্যানন্দ ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলবর্তী সমিতিপাড়া, এই উপকূলে বসবাস করে উদ্বাস্তু মানুষজন। যারা সাগরে মাছ আহরণ, শুটকির শ্রমিক কিংবা দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এবার এই উপকূলকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত করতে সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে আয়োজন করা হয় ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’।
প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার-এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান। যেখানে ৫০০ প্রান্তিক পরিবার জমা দিয়েছে ৩.৫ মেট্রিক টন প্লাস্টিক, আর পেয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রী। এখানে ১ কেজি প্লাস্টিকে মিলে ৬টি ডিম, ২ কেজি প্লাস্টিকে ১ কেজি ডাল, ৫ কেজি প্লাস্টিকে ১ লিটার তেল। একই সঙ্গে পরিচ্ছন্ন সৈকত আর হাসিমুখে ঘরে ফিরছে মানুষ।
আরও পড়ুন: সুন্দরবনে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে বন বিভাগের উদ্যোগ
প্লাস্টিক দিয়ে বাজার করতে আসা সমিতিপাড়ার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, ‘মাইকিং শুনে ১ সপ্তাহ ধরে প্লাস্টিক কুড়িয়ে ১১ কেজি প্লাস্টিক জমিয়েছি। এগুলো দিয়ে প্রায় ৮০০-৯০০ টাকার বাজার করেছি। এগুলো ভাঙগারির দোকানে নিয়ে গেলে ৩০০ টাকার বেশি পেতাম না। এরকম বাজার বার বার বসলে সৈকত থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে জমিয়ে রাখব। পরে প্লাস্টিক বিনিময়ে বাজারের দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী কিনব।’
একই এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, ‘এমন উদ্যোগ যদি অব্যাহত থাকে তাহলে গরীব মানুষের যেমন উপকার হবে, ঠিক তেমনি পরিবেশ প্লাস্টিক দূষণমুক্ত থাকবে। এটা তো ভাল উদ্যোগ, গরীব মানুষের উপকার হচ্ছে। এখানে তো বড়লোকরা বাজার করতে আসবে না। এরকম বাজার অব্যাহত থাকলে গরীবের অনেক উপকার হবে আর দেশের জন্যও উপকার হবে।’
আগামী মাসে কক্সবাজারে শুরু হচ্ছে পর্যটন মৌসুম। তাই সমুদ্রসৈকত এলাকাকে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখতে চায় প্রশাসন। পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য বলছেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মো. আ. মান্নান বলেন, ‘কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশকে প্লাস্টিক দূষনের হাত থেকে রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসন ও বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন একসাথে প্লাস্টিক এক্সেঞ্জ স্টোর চালিয়ে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে পরিবেশের যেমন উপকার হচ্ছে অন্যদিকে প্রান্তিক গরীব মানুষ খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন। ভবিষ্যতেও এই কাযক্রম আরো চলমান থাকবে।’
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা প্রতি বছরই পুরো কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে ৪ মাস ব্যাপী এই কাযক্রম পরিচালনা করে থাকি। এই চার মাসে সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে ২ লাখ কেজি সামুদ্রিক প্লাস্টিক সংগ্রহ করে ১০০% রিসাইকেল করার পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছি। এরইমধ্যে ২৭০০০ কেজি সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সচিবালয় দিয়ে শুরু হলো একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধের যাত্রা: পরিবেশ উপদেষ্টা
বিদ্যানন্দের সেচ্ছাসেবক মো. মুবারক বলেন, প্লাস্টিক ব্যবহার ও সংগ্রহে মানুষের অভ্যাসগত পরিবর্তন ছাড়া প্লাস্টিক দূষণ রোধ করা সম্ভব না। তাই পযটকদের মধ্যে অভ্যাসগত পরিবর্তন ও সচেতনতা তৈরিতে আমরা ইনোভেটিব সব আইডিয়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সংগৃহিত প্লাস্টিকের একটা অংশ দিয়ে সৈকতে ভাস্কর্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।’
]]>

৩ সপ্তাহ আগে
৪







Bengali (BD) ·
English (US) ·