প্রেরণায় বিবেকানন্দ

৩ সপ্তাহ আগে
আজ স্বামী বিবেকানন্দের ১৬২তম জন্মদিন। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতার শিমুলিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ৩৯ বছরের ক্ষণস্থায়ী জীবনকালে সেবা ও সমন্বয়ের বার্তা ছড়িয়ে তিনি আজ সমগ্র বিশ্বের সমগ্র মানবজাতির প্রেরণা হয়ে উঠেছেন।

স্বামী বিবেকানন্দের মহাশক্তিশালী বাণীগুলি আমাদের সর্বদা প্রেরণা দেয়—দুঃখ-দৈন্যে দৃঢ়তা এনে দেয়, যেন মৃত ব্যক্তিকেও জাগিয়ে তোলে। তিনি বলেছেন, “টাকায় কিছুই হয় না, নামেও হয় না, যশেও হয় না, বিদ্যায়ও কিছু হয় না। ভালোবাসায় সব হয়। চরিত্রই বজ্র দৃঢ় প্রাচীরের মধ্য দিয়া পথ করিয়া লইতে পারে।”

 

চরিত্র তৈরি হয় জীবনের ছোট ছোট কাজ থেকে। ভালো ও মন্দের চিন্তা থেকেই ভালো ও মন্দ কাজ হয়ে থাকে। ভালো কাজগুলি আমাদের জীবনে চিরস্থায়ী ছাপ রেখে যায়; মন্দ কাজগুলিও ছাপ ফেলে। সুতরাং ভালো কাজ ও ভালো চিন্তায় আমাদের লেগে থাকতে হবে। যে কাজ বা যে চিন্তা আমাদের ভবিষ্যতে বিপুল দুঃখ দেবে, তা কি করা উচিত? এভাবেই আমাদের বিচার-বুদ্ধি জাগিয়ে তুলতে বিবেকানন্দ অনুপ্রাণিত করেছেন।

 

ব্যক্তিগত জীবনেই হোক বা সামাজিক জীবনেই হোক—আমাদের প্রয়োজন দৈহিক ও মানসিক শক্তি। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মনের শক্তি। এই মনের শক্তির অভাবে আমরা সব জায়গায় পরাজিত হই। এই শক্তির উৎস সম্পর্কে বিবেকানন্দ আমাদের সন্ধান দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মনে রাখবেন ব্যক্তিগত ‘চরিত্র’ এবং ‘জীবন’ই শক্তির উৎস, অন্য কিছু নহে।” প্রতিটি নিঃস্বার্থ সেবা আমাদের জীবনকে উচ্চ চিন্তা ও মহৎ কর্মে অনুপ্রাণিত করে। আর সেজন্য প্রয়োজন একটি আদর্শ।

 

স্বামী বিবেকানন্দ সেই আদর্শ নেতা। তিনি তাঁর সবটুকু শ্রম ও সাধনা মানবকল্যাণে নিবেদন করেছেন। মাত্র ৩৯ বছরের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত দিয়েছেন মানবতার স্বার্থে। তিনি তাঁর অনুরাগীদের বলতেন, “জগতের কল্যাণে আমার জীবনটা দেব, তোরাও দিবি।” এভাবেই মহৎ কর্মে জীবন ধন্য হয়। মরতে তো হবেই—অপরের কল্যাণে জীবন দেয়ার চেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না।

 

পুনঃপুনঃ চেষ্টা করাকে অভ্যাস বলে। যেমন হারমোনিয়াম বাজানো শিখতে গেলে প্রত্যেকটি চাবিতে মনোযোগ দিয়ে টিপতে হয়। কিন্তু বাজাতে বাজাতে অভ্যাস হয়ে গেলে, না দেখেও হাত চালিয়ে গেলেও সুন্দর সুর বের হয়। অভ্যাসের এই পুনরাবৃত্তি থেকেই চরিত্র গড়ে ওঠে। আরও স্পষ্ট করে বিবেকানন্দ বলছেন, “চরিত্র কতকগুলি অভ্যাসের সমষ্টি মাত্র,... চরিত্র কেবল পুনঃপুনঃ কোন অভ্যাসের সমষ্টি মাত্র।”

 

স্বামী স্থিরাত্মানন্দ। ছবি: সংগৃহীত

 

মানুষ তৈরি হওয়া ও মানুষ তৈরি করাই আমাদের প্রধান ব্যাপার। বিবেকানন্দের কথায়, “মানুষ চাই, মানুষ চাই, আর সব হইয়া যাইবে।” মানুষ তৈরির এই সংগ্রামে আমাদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে—এ কথা বিবেকানন্দ বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন।

 

মানুষ তৈরির সংগ্রামে জয় আমাদের হবেই, কারণ বিবেকানন্দের প্রেরণা সর্বদা আমাদের সঙ্গে আছে। বিবেকানন্দের ঘোষণা, “চরিত্রবলে মানুষ সর্বত্রই জয়ী হয়।” তিনি সর্বদাই আছেন ‘অশরীরী বাণী’রূপে, আদর্শ রূপে, সকলের প্রাণে অনুপ্রেরণা হিসেবে। তিনি সকলের নেতা। তাঁর আদেশ পালনে সকলের কল্যাণ নিহিত। সঙ্গে থাকতে হবে এই আত্মবিশ্বাস—“অনেকের মধ্যে আমি উত্তম, অনেকের মধ্যে মধ্যম, অধম আমি কখনোই না।” বিবেকানন্দের বাণীর এই অমোঘ শক্তিই আমাদের সবার অনুপ্রেরণা।

 

আরও পড়ুন: বরেণ্য শিক্ষাবিদ কবীর চৌধুরীর জন্মশতবার্ষিকী

 

আসুন, স্বামী বিবেকানন্দের অমোঘ বাণীকে লালন করে আমাদের অন্তরের ভাবনায় ও কর্মে কল্যাণ সাধনের পথকে প্রসারিত করি। তাঁর মহান আদর্শ আমাদের শক্তি ও প্রেরণা হয়ে উঠুক নিরন্তর। এভাবেই আমরা গড়ে তুলতে পারি এক মানবিক ও আলোকিত সমাজ।

 

স্বামী স্থিরাত্মানন্দ

অধ্যক্ষ, রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশন, চাঁদপুর

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন