স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, ইউক্রেনের বাসিন্দা এবং পোল্যান্ডের প্রবাসী যুবক প্রেমিক এন্ড্রি প্রকিপ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া তরুণী প্রেমিকা বৃষ্টি প্রকিপ দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। তাদের ধর্ম ভিন্ন। দুই বছর আগে এন্ড্রি প্রকিপের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় বৃষ্টির। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। নিয়মিত চলে কথাবার্তা। এন্ড্রি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিজ দেশ ত্যাগ করে পোল্যান্ড ও বেলজিয়ামে ভবন নির্মাণের কাজ করেন।
অপরদিকে বৃষ্টি ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা পাশ করেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি আর লেখাপড়া করেননি। এর মধ্যে প্রেমের সম্পর্কে পরিণয়ে রূপ দেয়ার জন্যে গত ১৯ ডিসেম্বর এন্ড্রি বেলজিয়াম থেকে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভারত সীমান্তঘেঁষা পূর্ব কালাছড়া গ্রামের মৃত কামাল মিয়ার বাড়িতে আসেন। পরে আদালতে পৌঁছে হলফনামার মাধ্যমে নিজধর্ম খ্রিষ্টান পরিবর্তন করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বৃষ্টিকে বিয়ে করেন।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর এন্ড্রির বর্তমান নাম রাখা হয় মোহাম্মদ। বিয়ে হওয়ার পর নবদম্পতি অনেকটাই উচ্ছ্বসিত।
আরও পড়ুন: প্রেমিকের মৃত্যুর খবরে প্রেমিকার আত্মহত্যা!
বিয়ের পরিণয় সম্পর্কে নববধূ বৃষ্টি বলেন, ‘এন্ড্রি নিজে থেকে বিয়ে এবং ধর্ম পরিবর্তন করার প্রস্তাব দেন। ওকে আমি বিশ্বাস করি। কারণ একটি আংটি কেনার জন্য ও আমার কাছে টাকা পাঠায়। আংটিটি এখনও আমার হাতে আছে। ১৯ ডিসেম্বর দেশে এসে আমাকে বিয়ে করার কথা জানিয়েছে। ওর ওই কথায় আমার ন্যূনতম সংশয় হয়নি এবং সে আসবে আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমাদের বিয়েতে পরিবারের সম্মতি ছিল।’
এন্ড্রি প্রকিপ ওরফে মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। নিজের নতুন নাম রেখেছি মোহাম্মদ। আমি আনন্দিত। ফেসবুকে দুই বছর আগে বৃষ্টির সঙ্গে আমার পরিচয়। বৃষ্টি মুসলিম মেয়ে, অনেক ভালো এবং আমার দেশের মেয়েদের তুলনায় অনেক ভিন্ন ও ব্যতিক্রমধর্মী। তাই ১৯ ডিসেম্বর বেলজিয়াম থেকে এখানে এসে তাকে বিয়ে করেছি।’
তিনি জানান, গ্রামের প্রকৃতি, এলাকার মানুষগুলো তার অনেক ভাল লেগেছে। মাস খানেক বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে বৃষ্টিকে সঙ্গে নিয়ে তার বেলজিয়াম যাওয়ার কথা জানান এন্ড্রি প্রকিপ ওরফে মোহাম্মদ।
বৃষ্টির দাদী জোহেরা বেগম বলেন, আমার নাতিন জামাই অনেক সুন্দর। আমরা অনেক খুশি। দুজনের মনের মিলন হওয়ায় হাজার মাইলের দূরত্ব পেরিয়ে প্রেমের টানে এখানে এসেছে। এর চেয়ে আনন্দের আর কি আছে।
আরও পড়ুন: হবিগঞ্জে বিষপান করলো প্রেমিক-প্রেমিকা
কালাছড়া গ্রামের কাতারপ্রবাসী মামুন মিয়া, স্থানীয় বাসিন্দা জসিম ও বাবুল বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেলে আমাদের সঙ্গে আড্ডা হয় এন্ড্রি প্রকিপ ওরফে মোহাম্মদের। তিনি গ্রামে বসে খুব সুন্দর করে হুক্কা টানতে পারেন। তিনি সাবার সঙ্গে আড্ডা দিতে পছন্দ করেন। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে তিনি পোলান্ডে ও বেলজিয়ামে কনস্ট্রাকশনের কাজ করেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন দুই বন্ধু মিলে একটি কোম্পানি খুলেছেন।’
বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. ফরহাদ আলী বলেন, ‘ইউক্রেনের নাগরিক এক যুবক বাংলাদেশে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি আমার গ্রামের এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। আমরা এ ঘটনায় অনেকটাই খুশি। এছাড়া এই বিয়ের খবর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় এ নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।’