প্রায় আট দশক ধরে ফিলিস্তিনে চলছে নির্যাতন

১ সপ্তাহে আগে
জ্বলছে আগুন ফিলিস্তিনে! প্রায় আট দশক ধরে দখলদার ইসরাইলরা পূর্ণভূমি ফিলিস্তিনিদের উপর নির্যাতন,নিপিড়নের ষ্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংঘাত-সহিংসতা ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে দুই রাষ্ট্রের মধ্যে।

চলমান ইস্যুর প্রতিক্রিয়া শুধু ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ভেতরে সীমাবদ্ধ না থেকে তার মর্মান্তিকতার ব্যথা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব দরবারে। দেয়ালে পিঠ লেগে যাচ্ছে  ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের মাজলুম মুসলমানদের। তাই আকস্মিকভাবে গত ৭ অক্টোবর ২০২৪ইং শনিবার থেকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস দেশ বাঁচানোর আন্দোলনে আক্রমণ শুরু করলে আবারও আগ্রাসী হয়ে উঠে দখলদার ইহুদীবাদি ইসরাইল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা উইক্রেনের মত এখানেও গণহত্যায় সার্বিক সহায়তা ও অস্ত্র বিক্রির বাজার করে ফেলেছে।


তাদের প্ররোচনায় ফিলিস্তিনের আকাশে-বাতাসে আজ রকেট-বোমা,ককটেন, মিশিনগানের ছড়াছড়ি। ধ্বসে যাচ্ছে হাজারো নবীদের আবাসস্থল, পূর্ণভূমি ফিলিস্তিনের  বিরাট বিরাট ঐতিহাসিক স্থাপনা।

 

ইসরাইলের নির্মম বর্বরতায় হাহাকার করছে ফিলিস্তিনের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। অবুঝ শিশুরা বসুন্ধরার আলো-বাতাস দেখার আগেই বিদায় নিচ্ছে পৃথিবী থেকে। তারা জানে না তাদের কী অপরাধ? বোমার বিস্ফোরণে আকাশে উড়ছে ফিলিস্তিনি নাবালক নিস্পাপ শিশুদের মহদেহের ছিন্নভিন্ন অংশ! হাহাকার করছে স্বজনেরা!

 

আরও পড়ুন: যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলের নতুন প্রস্তাব, কী ভাবছে হামাস?


কোথায় তাদের কবর দেওয়া হবে? তারা বুঝতে পারে না তাদের আদর্শ মা-বাবা কারা? কারণ,ফিলিস্তিনের প্রতিটি বালুকণা ইহুদিবাদি ইসরাইলের হিংস্রতার আগুনে ক্ষত-বিক্ষত! একটি কবর খননের জায়গাটুকুও নেই অক্ষত। সব জায়গা হিংস্রতার গুলিতে ঝাঁঝরা, বোমায় লন্ডভন্ড,আগুনে দগ্ধ, কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের চাপায় পিষে-থেঁতলে যাওয়া ফিলিস্তিনদের লাশের মিছিল! বধ্যভূমি ও জল্লাদের মঞ্চে-কোন বিশেষণেই ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান গণহত্যা,নৃশংসতা, নিপীড়ন শেষ হচ্ছে না! টেরই পাওয়া যাচ্ছে না অশান্তময় দরিয়ার আসল কিনারা কোথায়? ইসরাইয়েলের নরপিশাচরা গণহত্যার চরম বর্বরতা চালাচ্ছে।

 

২০০৭ সাল থেকে দখলদার ইয়াহুদিরা গাজা উপত্যকা অবরোধ করে রেখেছে।  ফিলিস্তিনিদের আবাসস্থল পশ্চিমতীর ইসরাইলি খুনি বাহিনীর মহড়াকেন্দ্র। ফিলিস্তিন-ইসরাইল যুদ্ধ বাহিনীর মধ্যস্থতা দেখাচ্ছে দালাল ফিতনাবাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।


এ মধ্যস্থতাকারী ইসরাইলকে সহায়তার মাধ্যমে এখন বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ, নৌ-বহর-বিমানবাহিনী পাঠাচ্ছে পূর্ণভূমি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে। বিপর্যস্থ হচ্ছে মুসলমানদের ঐতিহাসিক প্রাণের ভূমি ফিলিস্তিন। হানাদারদের আঘাতে প্রতিদিন ফিলিস্তিনের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠছে। নিরহ নারী-পুরুষের আর্তনাদে পৃথিবীর এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত ভারি হয়ে যাচ্ছে!  তরবারির আঘাতে ফিলিস্তিনি শিশুদের মস্তক শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। ছিঁটকে পড়ছে হাত-পা। পবিত্র চেহারা দেখাচ্ছে শিশাঢালা আংড়ার ন্যায়। কামানের আওয়াজে প্রভাতে পাখির মধুময় শব্দ শুনা যাচ্ছে না। আযানের তাকবিরে  কান্নার ধ্বনি হচ্ছে। রক্তাক্ত হচ্ছে মুসলমানদের পূর্ণভূমি প্রাণের ফিলিস্তিন! রক্তাক্ত বিশ্ব আজ মানবাতা!


শহীদদের লাশের কাতার বেঁধে তামাশা করছে নিষ্ঠুর ইহুদিবাদি ইসরাইলরা! সল্প আয়তনের গাজার মুসলিমরা আজ গুলি-ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট,ট্যাংক হামলায় ধুলিস্বাৎ হয়ে যাচ্ছে। গাজাবাসিকে অবরোধ করে রেখেছে ইহুদীবাদি ডাকাত ইসরাইলরা। গাজার হাজার হাজার মানুষ বস্ত্রাচ্ছ্যুত- বাসা-বাড়িহীন।


গাজার আকাশটি সম্পূর্ণ খোলা বটে, তবে সেখানে চন্দ্র-সূর্য-তারার চেয়ে ইসরাইলের জঙ্গিবিমান,ক্ষেপণাস্ত্র, বোমার ঝাঁক বেশি দেখা যায়। এই জনপদটির আকাশ-বাতাস ভরে গেছে রাসায়নিক হামলার মরণ বিষে। এই নির্যাতনের শেষ কোথায়? 


আজ কোথায় বিশ্ব মানবতা! আজ কোথায় বিশ্বের শান্তিকামি হর্তাকর্তারা! ফিলিস্তিনিদের বুকের পাঁজর গুঁড়িয়ে এই বর্বর ইহুদীদের নির্যাতন চলছে বছরের পর বছর, দশকের পর দশক। তবুও 'সভ্যতার কাণ্ডারী'দের মুখে কোন আওয়াজ নেই। তাদের চোখে ইসরাইলিদের দালালির পর্দা ডেকে আছে?

 

আরও পড়ুন: নেতানিয়াহু ইসরাইলের ‘শত্রু’: সাবেক সেনাপ্রধান


যখন দিস্তা দিস্তা কাগজে তাদের লেবেল সভ্যতার বায়ান লিখা আছে, তখন ফিলিস্তিনিদের করুণ আকুতি, চিরন্তর বঞ্চনা ও অত্যাচার-নিপীড়নের ইতিহাস লিখলে কি এই দিস্তাগুলোতে সংকুলার হবে? আজ বিশ্ব মুসলমানরা কোথায়?


এখনও ঘুমিয়ে থাকার সময় বাকি? এখনও কি বিশ্ব মানবতা তন্দ্রাচন্ন! অন্যদিকে মুবারকবাদ জানাই মুজাহিদ ভাইদের সাহসীকতাকে! মরবে, তবুও পিছু হঠবে না। এমন ঈমানি চেতনা ফিলিস্তিনি তরুণদের রক্ত-রগে মিশে আছে। মাতৃভূমি ও পবিত্র আল-আকসা রক্ষায় তাদের সংগ্রাম চলছেই চলবে। এমন প্রতিবাদ কখনও বিফলে যায় না। জয় ফিলিস্তিন! জয় মাসজিদুল আকসা! একদিন ফিলিস্তিন বিজয় হবেই হব,ইনশাআল্লাহ।

 

লেখক: প্রাবন্ধিক,সম্পাদক, অনুবাদক।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন