শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে মোংলার নারিকেলতলায় এই জনসমাবেশ করে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপারসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ। এতে বক্তব্য রাখেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল, জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল, ঢাংমারি ডলফিন সংরক্ষণ দলের টিম লিডার ইস্রাফিল বয়াতি, খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জেল সোহেল।
ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিবেশের যে ক্ষতি করছে তা অপূরনীয়। রামপাল পাওয়ার প্লান্ট কেবলমাত্র চালু হয়েছে তাতেই এই অবস্থা, আর যদি পুরোপুরি চালু হয় তাহলে এই অঞ্চলের পানি, মাছ এবং জলজ প্রাণী ধ্বংস হবে। যেসব জলজ প্রাণী বেঁচে থাকবে তারা বিষাক্ত কেমিক্যাল বহন করবে, এগুলো এক জায়গায় থাকবে না। মানুষের শরীরে এবং খাদ্যশৃঙ্খলায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
আরও পড়ুন: খুলনা-মোংলা রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলবে কবে?
তিনি আরও বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যেহেতু এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি, তাই এটি বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প নবায়নযোগ্য জ্বালানি সোলার সিস্টেম চালু করা উচিত। রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু থাকলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে, তারচেয়ে কম ক্ষতি হবে এটি বন্ধ করে দিলে।’
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা) এর সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, ‘বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় পশুর নদে দূষণ দেখা গেছে। নদীতে ও সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ কমছে। জেলেরা কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছে। কাজেই জনস্বার্থে ও সুন্দরবন রক্ষায় অবিলম্বে রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা এখনই জরুরি। না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অতিরিক্ত নৌযান চলাচলের কারনে নদীভাঙনে বাস্তুহারা মানুষ নিরাপদ পানি ও টেকসই বসতির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করবে। তাই চলমান প্রকল্পসমূহ একটি জনসম্পৃক্ত সমন্বিত পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং পশুর নদীর জলজপ্রাণী রক্ষায় জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা দরকার। আমাদের দেশে প্রায় পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার একর খাসজমি আছে, যেখানে চাষাবাদ করা হয় না, ঘরবাড়িও নেই। এসব জমির ১০ ভাগও যদি ব্যবহার করা যায় তাতেই ২৫ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো যাবে। তাই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে জলবায়ু পরবর্তনের হাত থেকে বাঁচাতে সুন্দরবন সুরক্ষা ও বনের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা, দখল ও দূষণ থেকে নদী রক্ষা, নিরাপদ সুপেয় পানি, টেকসই বাঁধ ও জীবিকার ব্যবস্থা এখনই জরুরি।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দরে এখনও রাজত্ব চলছে সাবেক মেয়র খালেকের ঘনিষ্ট ফিরোজের!
অন্যান্য সংগঠনের নেতারা বলেন, পশুর নদী ও সুন্দরবন বিনাশী রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এই মুহুর্তে বন্ধ করা জরুরি। ভারতের স্বার্থে বনবিনাশী এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। পশুর নদীতে বিষাক্ত পারদের মাত্রা এখন অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে দশগুন বেশি। সুন্দরবনের প্রাণ পশুর নদী দূষনের ফলে মাছসহ জলজপ্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। পৃথিবীকে বাঁচাতে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর নির্ভরতার কোনো বিকল্প নেই।
রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে বিকল্প নবায়নযোগ্য সোলার সিস্টেম চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
]]>