প্রস্তুত খুলনার নবনির্মিত জেলা কারাগার, ১০০ বন্দি নিয়ে চালু হচ্ছে শনিবার

৩ সপ্তাহ আগে
১৪ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে অবশেষে খুলনায় চালু হতে যাচ্ছে নবনির্মিত জেলা কারাগার। আগামী শনিবার (১ অক্টোবর) সাজাপ্রাপ্ত ১০০ বন্দিকে স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে সীমিত পরিসরে শুরু হবে কার্যক্রম। জনবল সংকটের কারণে আপাতত পূর্ণ সক্ষমতায় নয়, অর্ধেক সক্ষমতা নিয়ে চালু হচ্ছে নতুন এই কারাগার।

২০১১ সালে খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের পাশে প্রায় ৩০ একর জায়গাজুড়ে শুরু হয় নতুন কারাগার নির্মাণ প্রকল্প। সময় ও ব্যয়ের একাধিক সংশোধনের পর ২৮৮ কোটি টাকায় শেষ হয়েছে কাজ। গত ১৪ বছরে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৮ বার, ব্যয় বেড়েছে দুই দফায়। অবশেষে সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা শেষে এবার খুলছে নতুন কারাগারের দ্বার।


সম্প্রতি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কারাগারের ভেতরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মাটি সমানকরণ, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। কারা ফটক, প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন কারারক্ষীরা।


খুলনা কারাগারের জেলার মোহাম্মদ মুনীর হুসাইন জানান, জনবল সংকটের কারণে আপাতত পূর্ণাঙ্গভাবে কারাগার চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রথম পর্যায়ে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি স্থানান্তর করা হবে। পর্যায়ক্রমে বন্দির সংখ্যা বাড়ানো হবে।


কারা সূত্রে জানা যায়, খুলনায় দুটি কারাগার পরিচালনায় মোট ৬০০ জন জনবল প্রয়োজন হলেও বর্তমানে রয়েছে ২০৮ জন, সম্প্রতি নতুন করে পদায়ন হয়েছে আরও ৪৪ জনের। তাই সীমিত জনবল নিয়েই পুরনো ও নতুন দুটি কারাগার চালানো হবে। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরনো কারাগারে রাখা হবে খুলনা মহানগরের বন্দিদের এবং নতুন কারাগারে রাখা হবে জেলার নয় উপজেলার বন্দিদের।


নতুন কারাগারটি নির্মিত হয়েছে আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ভবন, কিশোর ও কিশোরীদের জন্য আলাদা ব্যারাক, আর নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড। বন্দিদের চিকিৎসার জন্য থাকবে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, পাশাপাশি কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, লাইব্রেরি, ডাইনিং, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। শিশুসন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্যও রয়েছে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার, যেখানে সাধারণ বন্দিদের প্রবেশাধিকার থাকবে না।


আরও পড়ুন: কেরানীগঞ্জ কারাগারের হাজতির মৃত্যু


নতুন কারাগারের অবকাঠামোতে রয়েছে রঙিন ভবন, টাইলসের ফুটপাত, পাকা রাস্তা, ড্রেন, ওয়াকওয়ে, সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের আধুনিক প্রযুক্তি। বন্দিদের প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানা প্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে। নিরাপত্তা জোরদারে পুরো কারাগারের ভেতরে নির্মিত হয়েছে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল।


খুলনা গণপূর্ত বিভাগ–২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি। সবকিছু এখন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’


মাস্টারপ্লান অনুযায়ী, খুলনার নতুন কারাগারে সর্বমোট ৪ হাজার বন্দি রাখার সক্ষমতা থাকবে। আপাতত নির্মিত অবকাঠামোয় ২ হাজার বন্দির ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে আরও স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ থাকবে।


১৪ বছরের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে খুলনায় শুরু হচ্ছে নতুন অধ্যায়, একটি আধুনিক কারাগার, যেখানে শাস্তির সঙ্গে থাকবে সংশোধন, পুনর্বাসন ও মানবিক পরিবেশের পরশ।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন