প্রতি ট্রিপেই দিতে হয় চাঁদা!

১ সপ্তাহে আগে
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায় সিএনজি স্ট্যান্ডের ইজারার নামে চারটি স্পটে কাউন্টার বসিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। শুধু সিএনজি চালকদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের কথা থাকলেও বাদ যাচ্ছে না ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মিশুক। এতে ক্ষুব্ধ এসব যান চালকরা। তাদের অভিযোগ, প্রতি ট্রিপেই তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করায় আয়ের একটি বিরাট অংশ চলে যায় চাঁদায়।

এই চাঁদাবাজি বন্ধে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী চালকসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা। তবে তদন্ত করে গতানুগতিক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের।


ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নবীগঞ্জের কামাল উদ্দিন মোড়ে রাস্তায় কাউন্টার বসিয়ে সিটি কর্পোরেশনের ইজারা ও টোল আদায়ের নামে এভাবেই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। খেয়াঘাটের সিএনজি স্ট্যান্ডের ইজারার নামে চারটি স্পটে এমন কাউন্টার বসিয়ে নিম্ন আয়ের পরিবহন চালকদের কাছ থেকে এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদাবাজির শিকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক, মিশুক ও সিএনজি চালকরা।


তাদের অভিযোগ, খেয়াঘাট থেকে যাওয়া-আসায় প্রতি ট্রিপেই তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন স্থানীয় ইজারাদার রানা হোসেন ও তার লোকজন। ব্যাটারিচলিত যানবাহন চালকরা প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিচ্ছেন তাদেরকে। সিএনজি চালকরা দিচ্ছেন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এভাবে প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্রটি। ব্যাটারিচালিত যানবাহন থেকে টোল আদায়ের এমন ইজারা প্রথা জেলার কোথাও না থাকলেও শুধুমাত্র বন্দরের নবীগঞ্জেই টোল আদায়ের নামে চলছে অবাধে চাঁদাবাজি। এই জুলুমবাজির ইজারা প্রথা ও চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি করছেন ভুক্তভোগী চালকরা।


আরও পড়ুন: চাঁদাবাজদের তালিকা হচ্ছে, অচিরেই পদক্ষেপ: ডিএমপি কমিশনার


তবে সিটি কর্পোরেশনের ওপর দায় চাপিয়ে ইজারাদার রানা হোসেন দাবি করেন, ইজারা নিয়ে বৈধভাবেই টোল আদায় করছেন তিনি বলেন, গত এপ্রিল মাসে এক বছরের জন্য ৯২ লাখ টাকা দিয়ে সিটি কর্পোরেশন থেকে তিনি ইজারাপ্রাপ্ত হয়েছেন। মেয়াদ পর্যন্ত এভাবেই চলবে।


সময় সংবাদকে তিনি ইজারাদার আরও বলেন, ‘এটা সিটি কর্পোরেশনের সবচেয়ে বড় অংকের টেন্ডার। সর্বোচ্চ টেন্ডার ৯২ লাখ টাকা দিয়ে আমি এর ইজারা নিয়েছি। আমার ইজারার মেয়াদ আর তিন মাস সময় আছে। পরবর্তীতে সিটি কর্পোরেশন যদি ইজারা দেয় উনারা যেভাবে বলে দিবেন সেভাবেই হবে। যারা টেন্ডার পাবে তারা সেভাবেই চালাবে। অথচ দেখা গেছে, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই গত নয় মাসে এর কয়েক গুণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’


চাঁদাবাজি বন্ধে গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর আন্দোলনে নামেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। পরে উপজেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে ইজারাদারকে নিয়ে বৈঠক করলেও এর কোনো সমাধান হয়নি। চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে তা বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকরা।


আরও পড়ুন: চাঁদা না পেয়ে বসতঘরে আগুন, গ্রেফতার ৪


চাঁদা আদায়ের নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা সংগঠক সারফারাজ হক সজীব সময় সংবাদকে বলেন, ‘ইজারা প্রথা বন্ধের জন্য আমরা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব। উনারা যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা ছাত্ররাই দায়িত্ব নিয়ে চাঁদাবাজি বন্ধ করে দেব’।


এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম কামরুজ্জামান সময় সংবাদকে বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনে আয়ের অন্যতম উৎস হিসেবে বাজার, ঘাট ইজারা দেয়া হয়ে থাকে। সেই আয় দিয়ে আমরা উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকি। সেই উদ্দেশ্যেই আমরা নবীগঞ্জে খেয়াঘাটের স্থানে আয়ের উৎস হিসেবে সিএনজি স্ট্যান্ডের জন্য বৈধভাবে ইজারা দিয়েছি। তবে আমাদের নজরে এসেছে তারা তারা শৃঙখলা ভঙ্গ করে সিএনজি ছাড়াও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইক ও মিশুক চালকদের কাছ থেকে প্রতি বার যাওয়া আসায় বেশি অর্থ আদায় করছে। উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে কিভাবে এর সুষ্ঠু সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’


নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক সময় সংবাদকে বলেন, ‘নবীগঞ্জে সিএনজি ব্যতীত অটোরিকশা বা ব্যাটারিচালিত অন্যান্য যানবাহন থেকে টোল আদায় করছে বিষয়টি জানার পরে আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তাদের সঙ্গে বসেছেন এবং সেটেল করেছেন তারা এটা আর করবে না। এরপরেও যেহেতু অভিযোগ এসেছে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’


নবীগঞ্জ খেয়াঘাট থেকে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা, মদনপুর ও মদনগঞ্জ রুটে প্রতিদিন অন্তত ছয় শতাধিক অটোরিকশা, মিশুক, ইজিবাইক এবং সিএনজি চলাচল করে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন