পাহাড়ে আরও ৯ জনকে অপহরণ, যৌথ অভিযানের অনুমতি চান পুলিশ

১ সপ্তাহে আগে
কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় কেন্দ্রিক সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আরও ৯ জনকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোরে হোয়াইক্যং থেকে শামলাপুর যাওয়ার পথে দুই অটোরিকশা চালকসহ ৮ জনকে অপহরণ করা হয়।

এর আগে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে বাহারছড়া ইউনিয়নের বড় ডেইল এলাকার থেকে অপহরণ করা হয় একজনকে। পাহাড়ে একের পর এক অপহরণের ঘটনায় যৌথ অভিযান চালানোর জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ।


এর আগে সকালে পাহাড়ে গাছের চারা রোপণ করতে গিয়ে বনকর্মীসহ ১৯ জনকে অপহরণের তথ্য জানানো হলেও এই অপহৃতদের প্রকৃত সংখ্যা ১৮ জন বলে মঙ্গলবার সকালে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ওই ১৮ জনকে ছেড়ে দিতে ১৮ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবিও করা হয়েছে। অপহৃতদের উদ্ধারে স্থানীয় জনতা, বনবিভাগের সহায়তায় পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন পাহাড়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।


এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শামলাপুর সিএনজিচালিত অটোরিকশার লাইনম্যান মো. আবদুর রহিম।


আরও পড়ুন: পাহাড়ে অপহরণ চক্রের সেই ‘বদরুজ’ অস্ত্রসহ গ্রেফতার


তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে হোয়াইক্যং থেকে আসা শামলাপুরগামী দুটি অটোরিকশা হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে পৌঁছালে ঢালা থেকে ডাকাতদলের সদস্যরা দুই চালকসহ আটজনকে অপহরণ করেছে। খবর পেয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। তবে অপহৃতদের নাম-ঠিকানা জানা যায়নি।’


বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা জানান, হোয়াইক্যং-শামলাপুর সড়কে দুটি অটোরিকশা থেকে চালকসহ যাত্রী অপহরণের ঘটনা শুনে অভিযান চালানো হচ্ছে। কতজন অপহরণ হলেন সেটার সঠিক তথ্য এখনো জানা যায়নি। অটোরিকশা দুটি উদ্ধার করা হয়েছে।


এর আগে সোমবার রাত ১১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের বড় ডেইল এলাকার বাসিন্দার নাজিম উদ্দিন মাস্টারের ছেলে জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়ার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম।


আরও পড়ুন: অপহরণ ও ধর্ষণে সহযোগিতা মামলায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ রিমান্ডে


তিনি জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ১৫-২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে দক্ষিণ বড় ডেইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাস্তার মাথা নিজ মুদির দোকান থেকে জসিমকে অপহরণ করে পাহাড়ের ভেতর নিয়ে যায়। অপহরণের পর এখনও সন্ত্রাসীদের পক্ষে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।


জসিমকে উদ্ধারেও পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক শোভন কুমার শাহা।


এ দিকে বনকর্মীসহ ১৯ জন অপহরণের কথা প্রচার হলেও তার সংখ্যা ১৮ জন বলে জানান বনবিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুর রশিদ।


তিনি আরও জানান, বনবিভাগের কাজ করতে গিয়ে এদের অপহরণ করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ, এপিবিএন, র‌্যাব ও বনবিভাগে কর্মীসহ স্থানীয় জনগণ পাহাড়ে অভিযান চালাচ্ছেন। তবে কাউকে এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ফোন দিচ্ছেন বলে তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।


আরও পড়ুন: ২৮ লাখ টাকাসহ উল্লাপাড়ায় দুই ব্যাংক কর্মচারীকে অপহরণ


অপহৃত বনকর্মী সাইফুল ইসলামের বাবা জুহুর আলম বলেন, ‘ছেলের মোবাইল ফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে। আমার ছেলে বাবত এক লাখ টাকাসহ ১৮ জনের জন্য ১৮ লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। তাদের দাবি করা টাকা আমার নেই বললেই তারা ছেলেকে মারধর ও নির্যাতন করে ছেলের মাকে ফোন দিচ্ছেন। র‌্যাব, পুলিশ নিয়ে ঝামেলা করলে অপহৃতদের মরদেহ পাঠানো হবে বলে জানানো হচ্ছে।’


অপহৃত আনসার উল্লাহ ও আয়াত উল্লাহর মা খতিজা বেগম বলেন, ‘দুই ছেলেকে অপহরণের পর এক লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে ফোন করেছিল সন্ত্রাসীরা। দাবি করা টাকা না পেলে দুই ছেলের মরদেহ নিতে প্রস্তুত থাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’


হ্নীলা ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘পাহাড়ে থাকা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা একের পর এক অপহরণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এরপর মুক্তিপণ আদায় করে ধরে নিয়ে যাওয়া লোকজনকে ছেড়ে দেয়। সন্ত্রাসীদের দাবি করা টাকা না পেলে অপহৃতদের নানান ধরনের নির্যাতন করা হয়। এলাকার লোকজন অপহরণ আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে।’


আরও পড়ুন: যশোরে সাবেক কাউন্সিলরকে অপহরণের পর কুপিয়ে হত্যা


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘অপহৃতদের উদ্ধারে স্থানীয়দের সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।’


টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। সোমবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সীমান্ত পরিদর্শনে টেকনাফ যান। তিনি টেকনাফে অবস্থানকালীন সময়ে এই ১৮ জনকে অপহরণের ঘটনাটি সংঘটিত হয়।’


কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘গহীন পাহাড়ে এই অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের সেখানে একক অভিযান চালানোর মতো সরঞ্জাম নেই। তাই আমরা যৌথ অভিযান চালানোর জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। আশা করছি খুব দ্রুত আমরা একটি সফল অভিযান চালাতে পারবো।’


আরও পড়ুন: টেকনাফে বনবিভাগের কাজ করতে গিয়ে ১৯ শ্রমিক অপহরণ!


কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘অপহৃতদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’


কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, গত এক বছরের বেশি সময়ে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫৩ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। তাদের মধ্যে ৯৪ জন স্থানীয় বাসিন্দা, ৫৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ৭৮ জন মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।


টেকনাফ থানার তথ্যমতে, ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেকনাফ থানায় অপহরণের মামলা হয়েছে ১৪টি। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অন্তত ৬৫ জন। এ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ জনকে।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন