নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জীবনের প্রতিটি সমস্যার সমাধান ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে উৎসাহিত করেছেন। বিশেষত, পারিবারিক নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দিষ্ট দোয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যা পরিবারকে আল্লাহর রহমত ও সুরক্ষার আওতায় রাখতে সহায়তা করে।
আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, الدُّعاءُ سِلاحُ المؤمنِ দোয়া ঈমানদারের হাতিয়ার। (মুসতাদরাকে হাকেম: ১৮৩৬)
আরও পড়ুন: বদলি ওমরাহ করা যায়?
নবীজি আরও ইরশাদ করেন, إذا سأَلتَ فاسألِ اللَّهَ ، وإذا استعَنتَ فاستَعِن باللَّهِ যখন কিছু চাইতে হবে, আল্লাহ পাকের নিকটেই চাইবে, যখন সাহায্যের প্রয়োজন, আল্লাহ পাকের সাহায্য চাইবে। (তিরমিজি: ২৫১৬)
আমরা আমাদের দুনিয়া নিয়ে যতটা পেরেশান, আখেরাত নিয়ে ততটাই উদাসীন! অথচ একজন ঈমানদারের মূল চাওয়া-পাওয়ার বিষয় হলো ‘আখেরাত’। আমরা আমাদের পরকালের নাজাত এবং সফলতা নিয়ে তো উদাসীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। এমনকি দুনিয়াবী প্রয়োজনের ক্ষেত্রেও আল্লাহ পাককে আমরা ভুলে গেছি।
আমরা এতটাই বেপরোয়া যে, আমরা মনে করি, দুনিয়ার যাবতীয় বিষয় আমাদের ইচ্ছাধীন কিংবা প্রকৃতির যথা নিয়মে সম্পন্ন হচ্ছে বা হবে! এক্ষেত্রে আল্লাহ পাকের প্রতি তাওয়াক্কুল করা, আল্লাহ পাকের আশ্রয় প্রার্থনা করা, আল্লাহ পাকের সাহায্য কামনা করা আমরা ঐচ্ছিক বিষয় বানিয়ে নিয়েছি।
অথচ, আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়াবী ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়েও আল্লাহ পাকের দ্বারস্থ হওয়া, আল্লাহপাকের প্রতি তাওয়াক্কুল করা, আল্লাহ পাকের সাহায্য চাওয়াকে জরুরী মনে করতেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুবারক সুন্নাহ থেকে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সুরক্ষায় প্রসিদ্ধ কয়েকটি দোয়া:
১. বিসমিল্লাহ (بِسْمِ اللَّهِ): যেকোনো ভালো কাজ বা গুরুত্বপূর্ণ কাজের পূর্ণতা লাভের শ্রেষ্ঠ আমল ‘বিসমিল্লাহ’। এমনকি দুষ্ট শয়তানের হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষার ক্ষেত্রেও এটি মুসলিমদের একটি শ্রেষ্ঠ বর্ম।
২. আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর
أَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلَاءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ القضاءِ وشَماتة الْأَعْدَاء উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন জাহদিল-বালা'ই, ওয়া দারাকিশ-শাকা'ই, ওয়া সুউল-কাদা'ই, ওয়া শামাতাতিল-আদা।
অর্থ: হে আল্লহ, বিপদ-মুসিবতের আধিক্য, দুর্ভাগ্য, তাকদীরের অনিষ্ট লিখন এবং শত্রুর উপহাসের পাত্র হাওয়া থেকে আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি”। (সহীহুল বুখারী: ৬,৩৪৭, ৬৬১৬)।
৩. নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি (এ দোয়া টি) সকালে তিনবার পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত কোনো আকস্মিক বিপদ তাকে স্পর্শ করবে না। দোয়াটি হলো,
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন, ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস সামাই, ওয়া হুয়াস-সামিউল আলিম।
অর্থ: আল্লাহর নামে (শুরু করছি), যার নামের বরকতে আসমান-জমিনের কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। (আবু দাউদ: ৫০৮৮)।
৪. নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত ভাষায় দোয়া করতেন,
" اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا " .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল-হাদমি, ওয়া আউযু বিকা মিনাত্-তারাদ্দি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল-গারাকি, ওয়াল-হারাকি, ওয়াল-হারামি, ওয়া আউযু বিকা আন ইয়াতাখাব্বাতানিশ-শাইতানু ‘ইন্দাল-মাওতি, ওয়া আউযু বিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরান, ওয়া আউযু বিকা আন আমুতা লাদিগান।
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই- ১.ধসে পড়া বা চাপা পড়া থেকে ২.উপর থেকে নিচে পতিত হওয়া থেকে ৩.পানিতে ডুবা, অগ্নিকাণ্ড, অতিবার্ধক্য থেকে ৪.মৃত্যুর সময় শয়তানের ধোঁকা থেকে ৫.জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ থেকে এবং ৬.দংশিত হয়ে মৃত্যুবরণ থেকে। (আবু দাউদ: ১৫৫২)।
৫. আল্লাহর রসুল সকাল-সন্ধ্যায় এ দোয়াটি আমল করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ اسْتُرْعَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল-আফিয়াতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল-আখিরাহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল-আফওয়া ওয়াল-আফিয়াতা ফি দ্বিনি ওয়া দুনইয়া, ওয়া আহলি ওয়া মালি। আল্লাহুম্মাসতুর আউরাতি ওয়া আমিন রও'আতি। আল্লাহুম্মাহ্ফাজনি মিন বাইনি ইয়াদাইয়া, ওয়া মিন খালফি, ওয়া আন ইয়ামিনি, ওয়া আন শিমালি, ওয়া মিন ফাওকি, ওয়া আউযু বিআযমাতিকা আন উগতা’লা মিন তাহতি।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে যে দোয়া পড়বেন
হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। আমি আপনার কাছে আরও কামনা করছি আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার-পরিজন ও সম্পদের নিরাপত্তা। হে আল্লাহ আপনি আমার দোষ ত্রুটি গোপন রাখুন, আমাকে ভীতিকর বিষয় থেকে নিরাপদ রাখুন, আমাকে অগ্র-পাশ্চাত, ডান বাম, উপর-নিচ থেকে নিরাপত্তা দান করুন। (আবু দাউদ: ৫০৭৪)
আল্লাহ পাক নিজ গুণে আমাদেরকে তামাম দুনিয়ার সকল মুসলিমকে যাবতীয় বিপদ মুসিবত থেকে হেফাজত করুন, দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যাণ আমাদের নসিব করুন, আমিন।
]]>