সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে যেন এক বিস্ময়। পাথর লুটের পর আকর্ষণীয় ওই পর্যটন কেন্দ্রটি হারিয়েছে জৌলুস।
হঠাৎ এই হরিলুটের নেপথ্যে কারা? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে বের হয় রাজনৈতিক সম্পৃক্তাতা। ভোলাগঞ্জের কোয়ারির ইজারা বাতিল ও পাথর উত্তোলন নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে প্রায় সব রাজনৈতিক দল পাথর উত্তোলনের পক্ষে দাঁড় করিয়েছিল নানা যুক্তি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞাকে ভারতীয় আগ্রাসন দাবি করে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির ফয়জুল করীম বলেন, দ্রুত পাথর উত্তোলন না করলে বন্যার সৃষ্টি হবে। তবে দলটির মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলছেন, ইসলামী আদোলন লুটের ঘটনায় সম্পৃক্ত নয়, ঘটনায় জড়িত বড় দলগুলো।
আরও পড়ুন: পাথর লুটের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশ বা নীরবতা ছিল: রিজওয়ানা
তিনি বলেন,
আমাদের কথা ছিল, মানুষের জীবনযাত্রা যেন ঠিক থাকে, সেজন্য সব কিছু ঠিক রেখে পাথর তোলা। আমরা তো কাউকে লুটপাট করার জন্য বলিনি।
চলতি বছরের জুনে পাথর তুলতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে পাথরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সমাবেশে অংশ নিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দেয় সিলেট মহানগর জামায়াত। তবে ঘটনার পর পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছে দলটি।
জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগরীর আমির ফখরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ নষ্ট হবে না, এমন অবস্থার মধ্যে লিজ দেয়া গেলে সরকার রাজস্ব পাবে। সেইসঙ্গে এটা একটা শৃঙ্খলার মধ্যেও আসবে। সেই প্রেক্ষিতে অনেক দল সেখানে বক্তব্য দিয়েছিল। সেখানে আমরাও বক্তব্য দিয়েছিলাম। কিন্তু এখনকার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে এটা আপাতত চিন্তা করার সুযোগ নেই।
অন্যান্য দলের মতো পাথর উত্তোলনের পক্ষে অবস্থান নেয় স্থানীয় বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলছেন, হাজারো শ্রমিকের জীবন- জীবিকার বিষয়টি বিবেচনায় সীমিত পরিসরে পাথর উত্তোলনকে সমর্থন করলেও হরিলুট করে পরিবেশের বিপর্যয় সমর্থন করে না দলটি। জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সাদাপাথর লুটপাটে ভোলাগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব
জানা যায়, পাথর উত্তোলনের পক্ষে ছিল এনসিপি ও এবি পার্টির নেতারাও। খোদ সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবীও পাথর উত্তোলনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। গত ৮ জুলাই তার বক্তব্য, ‘সারা দেশে পাথর উত্তোলন করা গেলে সিলেটে করা যাবে না কেন? এর সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত।’
পাথর রক্ষা করতে না পারার আক্ষেপ প্রকাশকে সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি প্রশাসনও লুটপাটের দায়ভার এড়াতে পারে না।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন,
পাথর লুটের ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যেকেই সুবিধাভোগী। এই দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদেরকে সামাজিক বয়কটের মধ্যে ফেলা উচিত।
]]>