পাকিস্তানে বন্যা কেন এত প্রাণঘাতী?

২ সপ্তাহ আগে
আরও একবার ভয়াবহ বন্যা প্রত্যক্ষ করছে পাকিস্তান। আগ্রাসী এই বন্যায় প্রাণহানির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। গত কয়েক সপ্তাহে বন্যায় অন্তত ৮ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে, যার অর্ধেকেই ঘটেছে চলতি আগস্ট মাসে।

বন্যা আতঙ্ক এখনও শেষ হয়নি। ভারি বৃষ্টিপাত আর ভারতের অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের বাঁধ থেকে ছাড়া অতিরিক্ত পানির কারণে পাঞ্জাবে বন্যার উচ্চ ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) শাহদারায় রাভি নদীতে তীব্র বন্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে পাক কর্তৃপক্ষ।

 

এই অঞ্চলের সমস্ত প্রধান প্রধান বাঁধের গেট খুলে দেয়া হয়েছে এবং ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে একাধিকবার বন্যার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সতর্কতার পর পাঞ্জাবে ১ লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: তিব্বতে চীনের বাঁধের জবাবে অরুণাচলে পাল্টা প্রকল্প ভারতের

 

পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে খাইবার পাখতুনখোয়ার বহু গ্রাম এরই মধ্যে ভেসে গেছে এবং দক্ষিণে করাচির মতো বড় শহরগুলো অচল হয়ে পড়েছে। এখন পাঞ্জাবও ডুবতে বসেছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, দেশটির বন্যা কেন এত ধ্বংসাত্মক? আর জবাবও কঠিন নয়। বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা সবাই একমত: এটা প্রকৃতি ধ্বংস এবং অব্যবস্থাপনার ফলাফল।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তীব্রতর হচ্ছে বৃষ্টিপাত

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাকিস্তানে বর্ষাকাল ও বৃষ্টিপাত আরও অনিয়মিত এবং চরম হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বায়ুমণ্ডল আরও আর্দ্র হয়ে উঠছে, যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

 

সম্প্রতি খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের জেলায় মাত্র এক ঘন্টার মধ্যে ১৫০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যার ফলে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের সৃষ্টি হয় যা পাহাড়ের ঢালের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিয়েছে।

 

ক্লাউডবার্স্ট ও আকস্মিক বন্যা

 

ক্লাউডবার্স্ট হলো হঠাৎ প্রবল বৃষ্টি। সাধারণত নির্দিষ্ট একটি ছোট এলাকায় (৩০ বর্গকিলোমিটার বা তারও কম এলাকায়) ও স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি ঘটে। চলতি বছর (২০২৫) ক্লাউডবার্স্টের ফলে বন্যা তীব্রতর হয়েছে।

 

ক্লাইডবার্স্টের ফলে নদী ও ভূমি উভয়কেই প্লাবিত করে, যার ফলে আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের মতো মারাত্মক দুর্যোগ ঘটে। গত বছরগুলোর মতো এবারও একই ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ও খননকারী যন্ত্রসহ জরুরি উদ্ধারকারী দলগুলো সময়মতো ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতে পারেনি।

 

অব্যবস্থাপনা 

 

সরকারের অব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবকে আরও বাড়িয়েছে। নদীর অববাহিকায় আবাসিক এলাকা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে, যা পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। নদী সুরক্ষা আইনে নদীরে ২০০ ফুটের মধ্যে বাড়ি নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও তা উপেক্ষা করা হয়।

 

ফলে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা বাড়ে। খাইবার পাখতুনখোয়ার সোয়াত উপত্যকার বাসিন্দারা একাধিকবার তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হতে দেখেছেন। ২০১০ সালের বন্যায়, ২০২২ সালের বন্যায় এবং আবার এই বছর — প্রতিবারই নদীর খুব কাছে নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে।

 

সরকারের নজরদারি ও প্রস্তুতির ব্যর্থতা

 

দুর্বল প্রশাসন ব্যবস্থা এবং দুর্বল প্রস্তুতির কারণে পাকিস্তানে বন্যার ক্ষতি প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার সোয়াবি জেলার একটি ছোট গ্রামে আকস্মিক বন্যায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ভেসে যায়। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন অনেকে।

 

এ ঘটনার পর গ্রামবাসীদের অনেকেরই মধ্যে ক্ষোভ ফুটে ওঠে। তারা জানায়, বন্যার আগে সরকার থেকে কোনো সতর্কবার্তা পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষও এটা স্বীকার করেছে। পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ (পিএমডি) তাদের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে বলেছে, তারা ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিতে পারলে ক্লাউডবার্স্টের পূর্বাভাস দেয়া তাদের জন্য এখনও কঠিন।

 

যোগাযোগের সুবিধার অপ্রতুলতার কারণে প্রত্যন্ত এলাকার বসবাসরত সম্প্রদায়গুলো প্রায়ই সময়মত সতর্কবার্তা পায় না। কিছু হিমবাহ উপত্যকায় সাইরেন সিস্টেম স্থাপন করা হলেও সেগুলো যথেষ্ট নয়।

 

আরও পড়ুন: ধেয়ে যাচ্ছে ভারতের ছাড়া পানি, ভয়াবহ বন্যার শঙ্কায় পাকিস্তান

 

নগর পর্যায়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতা আরও গভীর। করাচিতে একাধিক আবহাওয়া ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বহুদিন ধরে পর্যাপ্ত তহবিল নেই।

 

আন্তর্জাতিক দাতাদের অর্থায়নে পাঁচ বছরের বন্যা সহনশীলতা পরিকল্পনার জন্য তহবিল বরাদ্দ থাকলেও তার মাত্র ১০ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন বিরোধী আইন প্রণেতারা।

 

করাচির মেয়র স্বীকার করেছেন, তিনি বছরের পর বছর ধরে ইসলামাবাদের কাছে ড্রেনেজ উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত তহবিল পাও যায়নি। তাছাড়া শহরের ড্রেনেজ উন্নয়ন ব্যয় এত বেশি যে ‘পুরো জাতীয় বাজেট’ এর পেছনে খরচ হয়ে যেতে পারে। 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন