পশ্চিম তীর দখলের ইসরাইলি পদক্ষেপ গাজা চুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলবে

৪ সপ্তাহ আগে
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটের অধিকৃত পশ্চিম তীর দখলের পদক্ষেপ গাজায় যুদ্ধ অবসানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে হুমকির মুখে ফেলবে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) ইসরাইলের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার সময় রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন যে, এমন কিছু আমরা সমর্থন করতে পারি না।’ এটি গাজা শান্তি চুক্তির জন্য ‘হুমকিস্বরূপ।’

 

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) একটি বিলে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্ট নেসেট। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড কার্যত দখল বা সংযুক্তিকরণের সমান এ পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করা হচ্ছে।

 

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার দল লিকুদ পার্টির বিরোধিতা সত্ত্বেও ১২০ সদস্যের নেসেটে ২৫–২৪ ভোটে বিলটি অনুমোদিত হয়। বিলটি আইন হিসেবে কার্যকর হওয়ার আগে মোট চার ধাপের ভোটাভুটির প্রথম ধাপ এটি।

 

আরও পড়ুন: গাজায় ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে ইসরাইল বাধ্য: আইসিজে

 

নেসেটের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জুদিয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীরকে দেয়া ইসরাইলি নাম) অঞ্চলে ইসরাইল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করার জন্য বিলটি প্রাথমিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে। এখন বিষয়টি আরও আলোচনার জন্য নেসেটের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে যাবে।

 

এক মাস আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি ইসরাইলকে অধিকৃত পশ্চিম তীর দখল করার অনুমতি দেবেন না। কিন্তু তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ইসরাইল সফরের মধ্যেই এই বিল অনুমোদন হলো।

 

বিশ্লেষকেরা বলছেন, অধিকৃত পশ্চিম তীর সংযুক্ত করার অর্থ হলো জাতিসংঘের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত ইসরাইল-ফিলিস্তিন দুই রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে শেষ করে দেয়া।

 

এদিকে ইসরাইলি পার্লামেন্টের পশ্চিম তীর দখলের ভোটের পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হামাস, কাতার, সৌদি আরব ও জর্ডান। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা নেসেটের ফিলিস্তিনি ভূমি সংযুক্ত করার চেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

 

আরও পড়ুন: নীতি পরিবর্তন না করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ফিরবে না ইরান: আরাঘচি

 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরের অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড একটি অবিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক এলাকা। এর ওপর ইসরাইলের কোনো অধিকার ও সার্বভৌমত্ব নেই।

 

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, এসব বিল দখলদার ঔপনিবেশিক শক্তির কুৎসিত চেহারা প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি বলেছে, ‘দখলদার ইসরাইলের পশ্চিম তীরের ভূমি দখলের জোরাল চেষ্টা অবৈধ বলে আমরা ঘোষণা করছি।’

 

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কঠোর ভাষায় এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে। বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ঐতিহাসিক অধিকারের প্রকাশ্য লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি চ্যালেঞ্জ। নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরবও। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি দখলদার কর্তৃপক্ষের পরিচালিত সব ধরনের বসতি সম্প্রসারণ ও দখলদারী তারা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

 

আরও পড়ুন: সৌদি আরবের নতুন গ্র্যান্ড মুফতি শেখ ড. সালেহ আল-ফাওজান

 

জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও নেসেটের ভোটের নিন্দা জানিয়েছে। এক্সে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। এটি দুই রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তি নষ্ট করবে এবং ফিলিস্তিনি জনগণের অবিচ্ছেদ্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও ১৯৬৭ সালের ৪ জুনের সীমারেখার ভিত্তিতে জেরুজালেমসহ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অধিকারে হস্তক্ষেপ।

 

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা ও টিআরটি ওয়ার্ল্ড

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন