পলান সরকার স্মরণে বই বিনিময় উৎসব শনিবার

১ সপ্তাহে আগে
বছরের পর বছর ধুলোমাখা পথে প্রতিদিন ১০/১২ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে মানুষের কাছে বই নিয়ে ছুটে যেতেন রাজশাহীর সাদা মনের মানুষ পলান সরকার। তিনি বিনামূল্যে মানুষকে বই দিতেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের হাতে বই পৌঁছে দিতেন। সেই বই পড়া শেষ হলে আবার গিয়ে নতুন বই দিয়ে আসতেন। এভাবে জীবনের ৯০ বছর অবধি তিনি নিজের পায়ে হেঁটে, নিজের টাকায় বই কিনে মানুষকে বই পড়তে অনুপ্রাণিত করে গেছেন।

আর এ প্রজন্মের জহির রায়হান একজন সাহসী কবি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। যিনি পলান সরকার সম্পর্কে জানার পরে ছুটে গিয়েছিলেন তার বাড়িতে। সেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় তিনি অনেকগুলি দিন অবস্থান করে একা একা ঘুরেছেন বিভিন্ন গ্রামে, যেখানে পলান সরকার হেঁটে হেঁটে এসে মানুষের হাতে বই তুলে দিত। জহির রায়হান সেই সব মানুষের সাথে কথা বলেছেন। নানা শ্রেণির মানুষের সাক্ষাতকার নিয়েছেন। অতঃপর বুঝে গেছেন- পলান সরকার আসলে কে? তারপর থেকে পলান সরকারকে নিয়ে জহির রায়হানের পথচলা। 


২০২২ সাল থেকে তিনি শুরু করেছেন পলান সরকার স্মরণে বই বিনিময় উৎসব। জহির রায়হান মনে করেন- পলান সরকার ছিলেন আমাদের অন্ধকার সমাজের বাতিঘর। তিনি সারাটি জীবন সুন্দর একটি সমাজের জন্য নিজেকে বলিদান করে গেছেন। তার সেই চিন্তার ফসলকে ঘরে তুলতে হলে আমাদেরকে বই নিয়ে কাজ করতে হবে। বইপড়া আন্দোলন যতদিন চলবে, ততদিন আমাদের সমাজে স্থিরতা থাকবে, শৃঙ্খলা থাকবে...থাকবে স্নিগ্ধ সুন্দর আলো। আর যেদিন মানুষের সাথে বইয়ের দুরত্ব তৈরি হবে। সেদিন থেকেই সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। তাই যখনই সমাজে পচন ধরে, তখন আমাদের বড্ড একজন পলান সরকারের। ববাবরের মতো এবারও সেই পলান সরকার স্মরণে ‘মেঘের ধাক্কা’ আয়োজন করতে যাচ্ছে বই বিনিময় উৎসব। ৫ জুলাই ২০২৫ ঢাকা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিকাল ৩টা থেকে শুরু হবে এই উৎসব। 


আরও পড়ুন: পলান সরকার স্মরণে বৃষ্টি ভেজা বই বিনিময় উৎসব


নগরবাসীকে জহির রায়হান অনুরোধ করেছেন- বাসা থেকে আসার সময় একটি করে বই সঙ্গে করে আনার জন্য। সেই বইটি উপস্থিত পরিচিত অপরিচিত কারো সঙ্গে বিনিময় করার জন্য। এ উৎসবে কেবল বই বিনিময়-ই হবে না। হবে একে-অন্যের ভাবনা চিন্তার দেয়া-নেয়া। ভালোবাসার বিনিময়।



তিনি বলেন, ‘কত রকমের উৎসব আমরা হতে দেখি। ফল উৎসব, পিঠা উৎসব আরও কত কি। আমরা সেই উৎসবে দল বেঁধে যাই। টাকা দিয়ে ফল কিনি বা পিঠা কিনি। স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে খাই। বাসায় ফিরে আসি...অতঃপর সব শেষ। কিন্তু উৎসবটা যদি হয় বিনিময়ের এবং বিনিময়ের সেই বস্তু যদি হয় বই, তাহলে উৎসব ফুরিয়ে যাবে। আর বইখানা আপনার কাছে চিরকাল রয়ে যাবে। আপনি পড়বেন, আপনার সন্তানেরা পড়বে এমনকি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম সেই বইটি পড়তেই থাকবে। উৎসবের স্টল থেকে টাকা দিয়ে এক প্লেট পিঠা খেলে কতটুকু উপকৃত হওয়া যায় জানি না। কিন্তু একটা বই- মানুষের জীবন বদলে দিতে পারে। জীবন আলোকিত হতে পারে।’


আরও পড়ুন: পলান সরকারের জন্মদিন উদযাপন করল ‘মেঘের ধাক্কা’


জহির রায়হান আরও বলেন, ‘যান্ত্রিক এই শহরে আমরা দিন দিন একটা যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি। আপনজন, বন্ধু-বান্ধব কারো সাথেই যোগাযোগ করা কিংবা খোঁজ খবর নেওয়া হয়ে উঠছে না। এই বই বিনিময় উৎসব হবে একটি প্রাণের উৎসব। এখানে আড্ডা হবে বই নিয়ে। আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে ঘিরে। এখানে আমরা একে অপরকে জানতে পারব। সুখ- দুঃখের খবর নিতে পারব। ফেরার পথে উপহার হিসেবে থাকবে বন্ধুর দেওয়া একটি বই। এরচেয়ে সুন্দর উৎসব আর কী হতে পারে...!

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন