পাঁচজনকে হারিয়ে স্বজনরা শোকাহত। বুধবার রাতে শামীম ফকিরের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলার বাড়িতে এসব কথা বলছিলেন শামীমের ভাইয়ের ছেলে পারভেজ ফকির।
পারভেজ ফকির এ সময় আরও বলেন, ‘চাচা কয়েক বছর ধরেই বলছিলেন, পরিবার নিয়ে বাড়িতে ঈদ করতে আসবেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন কারনে আসতে পারেন না। এ বছর একইভাবে ঈদ এর আগে অফিসে বসে একই কথা বলেছিলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে এবারের ঈদে বাড়িতে আসবেন। তিনি বলেছিলেন, বাড়ি আসার কথা বলে কয়েক বছর পরিবারের সাথে ঈদ করা হয় না, তাই এ বছর বাড়িতেই ঈদ করব। ঈদ করে ভাইয়ের মেয়ের বিবাহে যোগদান করে ঢাকায় ফিরব। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল আমাদের।’
আরও পড়ুন: গোপালগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই তরুণ নিহত
পারভেজ বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে মোবাইলে ভিডিও কলে বাড়ির সবার সাথে সে কথা বলেছিল। এরকম কখনো সবার সাথে সে কথা বলে না। গাড়িতে বসে সে তার ভাই ভাবিসহ পরিবারের সবার সাথে ঈদের কুশল বিনিময় করে। কিন্তু এ কথাই যে তার পরিবারের সাথে শেষ কথা হবে তা কে জানত।’
বুধবার সকালে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী রিলাক্স পরিবহনের দ্রুতগতির যাত্রীবাহী একটি বাস চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকার মহাসড়কের একটি বাঁকে আসে। তখন চালক ‘হার্ড ব্রেক’ করতে গেলে বাসটির সামনের অংশ ঘুরে যায়। এতে বাসটি মহাসড়কে আড়াআড়ি হয়ে যায়। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা কক্সবাজারগামী দ্রুতগতির একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসটির সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের শামীম ফকির (৪০), স্ত্রী সুমি আক্তার (৩৪), মো. আনিসা (১৪), ছোট মেয়ে ৪ মাস বয়সী ও বোনের মেয়ে তানু মারা যায়। নিহত শামীমের আরেক মেয়ে প্রেমা (১৩) গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।
শামীম ফকির দীর্ঘদিন ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন।
শামীম ফকিরের ভাই আসলাম ফকির বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হয়েছে আমার। ঈদের ছুটিতে অফিসের আর এক কলিগ ও তার পরিবার ঈদের ছুটি কাটাতে কক্সবাজার যাচ্ছে। কিন্তু বুধবার বিকেলে আমি ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পাই। মঙ্গলবার রাতে যে ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হবে তা কখনো ভাবি নি।’
আরও পড়ুন: শার্শায় প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত
শামীম ফকিরের বাড়ির অপর এক আত্মীয় নাদিরা আক্তার বলেন, ‘একটি পরিবার একসাথে এভাবে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের আত্মীয় স্বজন এবং এলাকায় কখনো আগে ঘটেনি। কিন্তু আমরা এখন ভাবছি শামীমের বেঁচে যাওয়া মেয়েটি একা কীভাবে বাঁচবে। কারণ প্রেমা তো তার পরিবারের সবাইকে হারিয়েছে, তার জীবন কীভাবে চলবে।’
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. আশরাফুল আলম খান বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি শুনেছি পরিবারের সাথে আমরা যোগাযোগ রাখছি এবং খোঁজ নিচ্ছি তাদের লাশ কখন বাড়িতে পৌঁছাবে। তবে পারিবকারিক একটি সুত্র জানায় নিহত পরিবারের মরদেহ গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরে আনা হবে না। ঢাকার মিরপুরে শামীমের শ্বশুর বাড়ি এলাকায় দাফন করা হবে।’