পছন্দের ব্যক্তিকে টেন্ডার ছাড়াই খেয়াঘাট ইজারা দিলেন ইউপি চেয়ারম্যান

১ সপ্তাহে আগে
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি নীতিমালা অমান্য করে অবৈধভাবে পছন্দের ব্যক্তিকে খেয়াঘাট ইজারা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি টেন্ডার কমিটির সভা না করে এবং টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই এক ব্যক্তিকে খেয়াঘাট ইজারা দেন। 


ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জিম্মি করে তার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।


এ ঘটনায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পৃথক লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়াসহ ঘটনা তদন্তে এক সদস্যের কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন।


করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সুতারপাড়া ইউনিয়নের উত্তর গণেশপুর খেয়া ঘাট ১৪৩২ সালের জন্য ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ১৭ মার্চ নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস থেকে একটি টেন্ডার কমিটির গঠন করে দেয়া হয়। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী টেন্ডার কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সর্বোচ্চ দরদাতার মধ্যে খেয়াঘাট ইজারা দেয়ার কথা। কিন্তু সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কমিটির সভা না করে নিজের পছন্দের কয়েকজন সদস্যের বাড়িতে খাতা পাঠিয়ে রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নেন।

আরও পড়ুন: হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্স নেই, অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু

ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন,  গত ৭ এপ্রিল চেয়ারম্যান কামাল হোসেন কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থান করা প্রশাসনিক কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে একটি নতুন রেজুলেশন খাতা কিনে চেয়ারম্যানের লোকের কাছে দিয়ে দিতে বলেন। তার কথা মতো প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজুলেশন খাতা নিয়ে শহরের পুরানথানা এলাকায় যান। এ সময় তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আলম, মিজান ও ফারুক দরজা বন্ধ করে তার কাছ থেকে জোর করে আগে লিখে রাখা রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নেন। চেয়ারম্যান ফোন করে তাকে স্বাক্ষর দিতে নানা হুমকি দেন। এ দিনই প্রশাসনিক কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।


এদিকে  মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের একজন নারীসহ ৩ জন সদস্য ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে উল্লেখ করা হয়, তারা টেন্ডার কমিটির সদস্য হলেও উত্তর গণেশপুর খেয়াঘাট ইজারার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। চেয়ারম্যান টেন্ডার কমিটির সভা ছাড়া ভুয়া রেজুলেশন করে তার পছন্দের এক ব্যক্তিকে ঘাট ইজারা দেন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।


করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

 

তিনি জানান, অভিযুক্ত চেয়ারম্যানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। আর প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে হুমকি ও তার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার বিষয়টি তদন্তের জন্য একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্তের পর এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন: পুলিশের হাতে ধরা পড়ল ‘খুনের পরে গুম’ হওয়া আলাউদ্দিন!

অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সুতারপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. কামাল হোসেন প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে হুমকি এবং জোর করে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। 


টেন্ডার কমিটির সভা না করার বিষয়টি স্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, সব সদস্যের কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে করিমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সুপারিশে একজনকে উত্তর গণেশপুর খেয়াঘাট ইজারা দেয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন