যেখানে কোনো প্রাণী নয়, নিয়ে আসা হয় নানা রোগে বা পোকায় আক্রান্ত ধানসহ বিভিন্ন জাতের সবজি এবং গাছ। কৃষি বিভাগের বেশ কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে এমন উদ্যোগে সাড়া ফেলেছেন কৃষকরা, বললেন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা।
নেত্রকোনা-মদন সড়কের আটপাড়া উপজেলার দুর্গাশ্রম চৌরাস্তায় অবস্থিত এ ফসলের হাসপাতাল।
যেটি পরিচালনা করছে স্থানীয় কৃষকদের একটি সংগঠন দুর্গাশ্রম বাঘড়া হাওড় কৃষক সমবায় সমিতি। চারজন চিকিৎসকদের মধ্যে তারা সার, পোকা এসবের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। কম্পোস্ট সার তৈরি বিশেষজ্ঞ কৃষক সায়েদ আহমেদ খান বাচ্চু, জৈব বালাইনাশক বিশেষজ্ঞ কৃষক আব্দুল আলীম, ফসলের পোকা পরিচিতি বিশেষজ্ঞ কৃষক আব্দুল ওয়াদুদ ও মাজড়া পোকা বিশেষজ্ঞ কৃষক আলীম উদ্দিন।
আরও পড়ুন: পাকা ধানে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব, দুশ্চিন্তায় কৃষক
কৃষক সায়েদ আহমেদ খান বাচ্চু জানান, তিনিই এটির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরপর বারসিকের সহযোগিতায় চারটি দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। নিজের দেশ এবং অন্য দেশের ফসলের পরিচিতি বিনিময় করেন। তাদের কাছেই অর্ধশত প্রজাতির দেশীয় জাত রয়েছে। যেগুলো অনেক বছর আগে ভালো ফলন হতো। তখন এত এত সারের প্রয়োগ ছিল না। অতিরিক্ত সারের প্রয়োগ ফলনে যেমন ক্ষতি হয়, তেমন মাটির উর্বরতা কমে যায়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ৭ জন উপদেষ্টা এবং ২০ জন সদস্য মিলে নিজেরা প্রতিমাসে ২০ টাকা চাঁদা তুলে অফিস অর্থাৎ হাসপাতাল পরিচালনা করি। যেগুলো না বুঝি তখন কৃষি অফিসের সহযোগিতা নেই। এ বিশেষজ্ঞ ফসলের ‘চিকিৎসকরা’ জৈব সার ব্যবহার করে এবং কম কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপায়ে অন্য কৃষকদের ফসল ফলাতে উদ্বুদ্ধ করেন। তারা কৃষি বিভাগ ও ধান গবেষণাকারী সংস্থা রামেশ্বরপুর রিসোর্স সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতি গঠন করে মাসিক ২০ টাকা চাঁদা দিয়ে মোট ২৭ জন এ হাসপাতাল পরিচলনা করে যাচ্ছেন। প্রতিদিন গড়ে আট থেকে ১০ জনের মতো কৃষক আসেন পারমর্শ নিতে। অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন ফসলের জমিও তারা পরিদর্শন করেন।’
পরিবেশবিদরা মনে করছেন, প্রাকৃতিক উপায়ে সম্পদ তৈরি করে সমাধান দিচ্ছেন। এতে পরিবেশগত বিপর্যয় থেকে কৃষক উপকৃত হচ্ছেন। মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকছে। ব্যাঙ পাখি সাপ বাড়ানোর কাজটি করে যাচ্ছেন তারা। এটি একটি উদাহরণ হতে পারে দেশব্যাপী।
পরিবশেগত সংকট মোকাবিলায় কাজ হবে বলে জানান বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. অহিদুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামে গ্রামে কৃষকরা বিষমুক্ত সবজি চাষে এবং কম্পোস্ট সার তৈরি করে কৃষি আবাদ করলে ফলনও ভালো হয়। এখানের কৃষকরা সচেতন। শুধু যে রোগ নির্ণয় বা পোকা দমনে কাজ করছে এমনটা না। যেসব পোকা মাকড় প্রয়োজনীয় সেগুলোকে কীভাবে বাড়ানো যায়, এ কাজটিও করছেন।
আরও পড়ুন: আলুর হিমাগারে কোটা বাণিজ্য, বঞ্চিত স্থানীয় কৃষকরা
নেত্রকোনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (খামাড়বাড়ি) উপ পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেন, ‘আটপাড়া গ্রামে কৃষকরা মিলে যে ফসলের হাসপাতাল করেছে, এটি অত্যন্ত ভালো কাজ হয়েছে।
তারা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে আইপিএমের ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের যে দলটি মাঠ পর্যায়ে বিষমুক্ত ফসল চাষে কাজ করছেন। তারা মাঠ পর্যায়ে ফসলের পোকা বা কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সেইসঙ্গে আমাদের কাছেও পাঠান। তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে কৃষকদের সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রমটি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।’