জানা যায়, চলতি অর্থবছরে নেত্রকোনার সরকারি খাদ্যগুদামে আমন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৮৬৩ মেট্রিক টন থাকলেও কেনা হয়েছে ৮ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন। একইভাবে আতব চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার ৫৮৭ মেট্রিক টন থাকলেও কেনা হয়েছে ৪১৮ মেট্রিক টন।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১৫ মার্চ দুই ধরনের চালের ক্রয়ের মেয়াদ শেষ হলেও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও। হিসাব অনুযায়ী, সরকারি লক্ষ্যমাত্রার আতপ চাল ২৬ শতাংশ ও সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৪৬ শতাংশ।
জেলা কৃষি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলায় আমন আবাদ হয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর। কর্তন হয় এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ হেক্টর, যা থেকে চাল উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৭১ হাজার ৯৩৬ মেট্রিক টন, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৭ মেট্রিক টন। সেই হিসাবেও কম পাড়ার কথা নয়।
মিল মালিকরা বলছেন, গত বন্যায় ধান উৎপাদন ব্যাহত, বাজারের চেয়ে কম দামসহ নানা কারণে সরকারি খাদ্য গুদামে সরবরাহ কমেছে।
আরও পড়ুন: মৌলভীবাজার / চা বাগানগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়
মিল মালিক ফেরদৌস ভুইয়া বলেন,
সরকারি গোদামে মৌসুমের সময় ভরা থাকে। পরে যখন খরচ বেশি পড়ে, তখন ক্ষতি করে মিলারদের চাল দিতে হয়। মৌসুমে যখন ধান কাটা লাগে, তখন সঙ্গে সঙ্গে কিনে ফেললে কৃষকরাও লাভবান হবেন, সরকারিভাবেও চাহিদা পূরণ হবে।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নেত্রকোনার সভাপতি এইচ আর খান পাঠান সাকী বলেন, গেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় আবাদ কম হয়েছে। এছাড়া বাইরে সরকারি রেটের চেয়ে বেশি থাকায় কৃষকরা ধান একেবারেই দেননি। চাল কিছুটা দিয়েছেন। মিলাররাও বাইরে থেকে আনায় খরচ বেশি হয়েছে।
প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল জানান, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তারাই সিন্ডিকেট করে মিলের চাল দেয়। এবার অনেকেই পলাতক থাকায় এবং চাল না দেয়ায় এমনটা হয়েছে। খাদ্য অধিদফতরের নানা গাফিলতি রয়েছে। এছাড়াও অন্য কিছু আছে কিনা সেটাও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।
তবে নিজেদের ব্যর্থতা নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মোয়েতাছেমুর রহমান। আর ধানের কম উৎপাদন ও জুলাই বিপ্লবের পর অনেক মিল মালিক পলাতকের অজুহাত দিলেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।
আরও পড়ুন: খরচের তুলনায় বেশি লাভ, সয়াবিন আবাদে ঝুঁকছেন লক্ষ্মীপুরের চাষিরা
বনানী বিশ্বাস বলেন,
আমরা সংগ্রহ করেছি। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি। তার্গেট থেকে আমরা বেশি পিছিয়েও নেই। ময়মনসিংহের কিছুটা কাছাকাছিই আছি।
তিনি আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারার জন্য কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক একটা বড় কারণ রয়েছে। অনেকেই পলাতক থাকাও তার্গেট পূরণ করা যায়নি।
খাদ্য বিভাগের তথ্যমতে, নেত্রকোনায় সিদ্ধ চালের জন্য ৮৪টি ও আতপ চালের জন্য ১১টি চালকল তালিকাভুক্ত রয়েছে।
]]>