প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা। পাহাড়ঘেরা এ জনপদে দীর্ঘদিন ধরে চলছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট।
স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি এলাকার বেশিরভাগ স্থানে সুপেয় পানির জন্য নেই নলকূপ। পান ও গৃহস্থালি কাজের জন্য দীর্ঘপথ হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঝরনা থেকে। ঝরনায় অনেক সময় নেমে আসে দূষিত পানি। আর সেই পানি পান করে ভুগতে হয় রোগ-বালাইয়ে। শুকনো মৌসুমে সুপেয় পানির সংকট পৌঁছে যায় চরমে। যে কয়টি নলকূপ আছে সেগুলোতেও ঠিক মতো উঠে না পানি। অন্যদিকে, বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে দূষণ বেড়ে যায় ঝরনার পানিতেও।
তবে সরকারিভাবে জেলাজুড়ে গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য বরাদ্দের কমতি না থাকলেও তা পৌঁছে না পাহাড়ি জনপদে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকেই জীবন বাঁচানোর জন্য দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি পান করছেন এসব পানি। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছর পরেও নামকাওয়াস্তে কিছু এলাকায় নলকূপ দিলেও সীমান্ত এলাকার বেশিরভাগ স্থানেই পৌঁছেনি সুপেয় পানির জন্য কোনো নলকূপ।

কলমাকান্দা দুর্গাপুর উপজেলার একেবারেই সীমান্ত ঘেঁষা প্রায় প্রতিটি গ্রামের চিত্র একই রকম। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে পানির জন্য চলে হাহাকার।
আরও পড়ুন: উপকূলবাসীর সুপেয় পানি সংকটের টেকসই সমাধান কবে?
স্থানীয়দের অভিযোগ, সারাবছরই সুপেয় পানির অভাব। শুকনায় এক রকম, বর্ষায় অন্য রকম কষ্টে পার করতে হয় জীবন। কলমাকান্দা উপজেলার চন্ড্রডিঙা এমনই এক অবহেলিত জায়গা যেখানে ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়স পার করে ফেলা মানুষেরও আক্ষেপ রয়ে গেলো সুপেয় পানি পান করার। কোথাও কোথাও স্থানীয়ভাবে রিং টিউবওয়েল স্থাপন করলেও শুকনো মৌসুমে আয়রনের কারণে তাও হয়ে যায় পানের অযোগ্য।
অথচ সরকারিভাবে জেলাজুড়ে কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ হয় গভীর নলকূপের। কিন্তু বরাবরই দুর্ভাগ্য নেমে আসে এসব পাহাড়ি ও সীমান্তবর্তী মানুষের জীবনে।
তবে পাহাড়ের সমস্যা স্বীকার করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জানান, এই সমস্যা অনেক আগেই সমাধান করা যেতো। কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা নির্ধারণ করেন নলকূপের স্থান।

জেলা জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, ‘এই জেলায় বরাদ্দ অপ্রতুল থাকলেও পাহাড়ি অঞ্চলে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যেত। যদিও তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ নেই। কিন্তু স্থান তালিকা যেভাবে দেন জনপ্রতিনিধিরা সেভাবেই বরাদ্দ আসে। সমস্যা নিরসনে একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। তবে প্রকল্পটি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কলমাকান্দা দুর্গাপুরে বেশকিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নেত্রকোনার দশটি উপজেলা ৮৬ ইউনিয়নে টিউবওয়েল স্থাপনের চলমান প্রকল্পে মোট সাত শতাধিক টিউবওয়েল স্থাপন করা হচ্ছে।’