নিহত কর্মীকে অস্বীকার বিএনপির, তৃণমূলে ক্ষোভ!

১ সপ্তাহে আগে
রংপুরের বদরগঞ্জে দোকান নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক কর্মী নিহতের ঘটনায় দলের আট নেতাকে বহিষ্কারের পর এবার তাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম রংপুর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা শফি কামাল বাদী হয়ে মানহানির মামলা করেছেন। তবে মামলার অভিযোগে নিহত কর্মী লাভলু সরকারের দলীয় পরিচয় অস্বীকার করে তাকে ‘জনৈক একজন ব্যক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন নিহতের পরিবারের সদস্যসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

গত বুধবার (৯ এপ্রিল) রংপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল আমলী বদরগঞ্জ আদালতে বহিষ্কৃত ৮ নেতার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।


মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিস্বার্থে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কলহ-বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। আসামিরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সম্মানিত চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির দলীয় সুনাম ক্ষুণ্ন করে মানহানির অপরাধ করেছেন। আসামিরা এবং তাদের দোসরদের কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয় জনৈক লাভলু মিয়া নামে এক ব্যক্তি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।


তবে পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি, লাভলু সরকার বিএনপির একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক মামলায় কয়েকবার জেল খেটেছেন। এবং সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩১ জুলাই পুলিশের করা মামলায় সাত দিন জেল খেটেছেন তিনি।


দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত লাভলু সরকার উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। এ বছর কাউন্সিলে ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন তিনি।


মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘লাভলু সরকার বিএনপির ত্যাগী কর্মী ও দুর্দিনের কাণ্ডারি ছিলেন। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির কমিটিতে ছিলেন। তাকে অস্বীকার করাটা খুব দুঃখজনক।’


আরও পড়ুন: রংপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত ১


জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাহেদা হাসান বলেন, ‘একজন বিএনপির কর্মী মারা গেলো তারপরও তাকে আমরা অস্বীকার করলাম। দীর্ঘদিন জেল খেটেছে, গুলি খেয়েছে শেষ পর্যন্ত একজন কর্মী মারা গেলো। ৮ তারিখে একটা মামলা হলো, ৫ দিন পরেও কেউ জানলো না। মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপি বলতেই লাভলু সরকার। তাকে দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে মারল। আমার উপজেলার আহ্বায়ক পরিতোষ স্যারের কাছ থেকে রাজনীতি করেছে সেই কর্মী। অথচ আমাদের উপজেলা ও পৌর বিএনপি শোকবার্তাও দিলো না। আমরা শহীদ মিনারে মাইকে বলেছি তিনি বিএনপি নেতা ছিলেন। তারপরও বলা হচ্ছে তিনি বিএনপির কেউ না। এর চেয়ে দুঃখ আর নেই।’


দুঃখ প্রকাশ করে এই নেতা বলেন, ‘আজকে আমি মারা গেলেও হয়তো বদরগঞ্জ বিএনপি এটাই করবে।’


মামলার দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আনিছুর রহমান লাকু।


মামলার অভিযোগে নিহত দলীয় কর্মীর পরিচয় অস্বীকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপির কমিটিগুলোর কাগজ জেলায় আসেনি। দলের আগের কমিটিগুলো আর নেই। সবখানে নতুন করে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হবে। হয়ত এ কারণে এটি হয়েছে।’


গত ৫ এপ্রিল বদরগঞ্জ পৌর শহরের একটি দোকান নিয়ে মালিক ও ভাড়াটিয়ার দ্বন্দ্বের জেরে তাদের পক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী সরকার ও উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক মানিকের অনুসারীরা। এ সংঘর্ষে একজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হন।


এই ঘটনায় সেদিনই দখলদারিত্বের অভিযোগে তিন নেতাকে ঘটনার কারণ দর্শানোর চিঠি দেয় জেলা বিএনপি। একদিন পর আট নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করে বিএনপি।


আরও পড়ুন: রংপুর /রংপুরে বিএনপি ও যুবদলের ৮ নেতা বহিষ্কার


বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, একটি দোকানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে এই আট নেতার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে।


এ মামলার আসামিরা হলেন: সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির আট নেতা- রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, বদরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির মানিক, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল হক মানিক, পৌর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সুমন সরদার, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুল হক কয়েল, উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক, কালুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাম কিবরিয়া। এছাড়া এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ১৫০ জন।


এ সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় বদরগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়েছে। এবং এ মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আতিকুর রহমান।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন