নিম্নমুখী সবজি, মাছের বাজারের কী হালচাল?

১ সপ্তাহে আগে
দেখতে দেখতে শেষ প্রান্তে চলতি বছর। সারা বছর নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তার ঘাম ঝড়ালেও বছরের শেষ প্রান্তে এসে কমেছে শাক-সবজির দাম। তবে এখনও চড়া মাছের বাজার। আর ঊর্ধ্বমুখী দেশের চালের বাজারও।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) চলতি বছরের শেষ দিনে কেরানীগঞ্জের আগানগর, রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।

 

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বাড়ছে শীতকালীন শাক-সবজির সরবরাহ। দোকানিরাও এর পসরা সাজিয়ে বসছেন। এতে দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আনিস বলেন, সরবরাহ বাড়ায় সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কোনো কোনো শাক-সবজির দাম।

 

আরও পড়ুন:ফিরে দেখা ২০২৪ / বছরজুড়ে দামের উত্তাপে পুড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার

 

বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০-২৫ টাকা, লতি ৬০ টাকা, কহি ৫০ টাকা ও পটোল ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, গাজর ৪০-৫০ টাকা, ক্ষিরাই ৫০ টাকা, টমেটো ১০০-১২০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, শালগম ২৫-৩০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়।

 

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সবজি কিনছেন ক্রেতারা। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৩০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৩০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা ও পুরাতন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা, ব্রকলি ৩০-৪০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা।  

 

দাম কমেছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে এটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৮০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৪০-৬০ টাকা। এছাড়া, বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।

 

সবজির দাম কমতে শুরু করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ভোক্তাদের মধ্যে। তারা জানান, শাক-সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে মাছসহ অন্যান্য পণ্যের দাম অনেক চড়া। তামিম নামে এক ক্রেতা বলেন, শীতকাল হওয়ায় কমছে শাক-সবজির দাম । কিন্তু মাছ, চাল ও মুরগির দাম বেশ চড়া। বিশেষ করে চালের বাজারে। এখনই এই বাজারের লাগাম টেনে ধরতে হবে।

 

সবজিতে স্বস্তি মিললেও সুখবর নেই মাছের বাজারে। বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

 

এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

অস্থির দেশের ইলিশের বাজারও। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩২০০ টাকা, ৮০০-০০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২০০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।

 

চড়া মাছের বাজার। ছবি: বিশ্বজিৎ দাস বিজয়

 

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বাড়ছে। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে যাচ্ছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইলিশ বিক্রেতা মো. শুকুর আলী বলেন, ইলিশ কম ধরা পড়ছে। এতে বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। দিন দিন ইলিশের দাম ভোক্তার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। এতে কমছে বিক্রিও।

 

ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের বাজারে অস্থিরতা। গত তিন সপ্তাহে চিকন চালের দাম কেজিতে ৪ থেকে ৮ টাকা এবং মোটা ও মাঝারি চালের দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭৬-৮০ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়।

 

এদিকে চাহিদা বাড়ায় বাজারে ফের বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে খুচরায় প্রতি কেজি পুরান দেশি পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা, নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৬০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়।

 

আরও পড়ুন: এবার আলু-পেঁয়াজের বাজারেও স্বস্তি!

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট ও বিয়ের মৌসুম চলায় চাহিদা বেড়েছে পেঁয়াজের। এতে সামান্য বেড়েছে দাম। উৎসবের ভাব কমে গেলে দামও কমে আসবে।

 

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান।

 

আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন