নিজের ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ: শিক্ষক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলা

৩ সপ্তাহ আগে
নড়াইল সদরে এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে। তবে ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা দায়ের করলেও পাঁচ দিনে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


অভিযুক্ত শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম মাগুরা কালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যোগদান করেন৷ আর চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার বাড়ি নড়াইল সদরের বোড়ামারা গ্রামে।


জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মাগুরা কালুখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে কোচিং করাতেন৷ চলতি মাসের ১৫ অক্টোবর কোচিং শেষে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়। নড়াইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নড়াইলের ২১ অক্টোবরের স্মারকের প্রস্তাব মোতাবেক 'সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী তাকে সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত আদেশ প্রদান করা হলো।


জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম সময় সংবাদকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্ত খোদ প্রধান শিক্ষক, রাস্তায় নেমেছে কোমলমতিরা


সম্প্রতি নড়াইল সদরে মাগুরা কালুখালী সরকারি বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তোলা হয় বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিবার শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলামকে একমাত্র অভিযুক্ত করে থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা করেন। মামলায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি, চলতি মাসের ১৫ তারিখ বিকেলে স্কুল ছুটির পর একটি শ্রেণির ৪ জন শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন মো. তরিকুল ইসলাম। একজন ছাত্রী মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে বাহিরে যান আর শিক্ষক কৌশলে দুই ছাত্রকে পাঠালেন জাতীয় পতাকা খুলতে। এই ফাঁকে কোমলমতি ছাত্রীকে একা পেয়ে রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীর স্পর্শকাতর স্থানে খারাপভাবে স্পর্শ করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এসময় শিক্ষার্থীর চিৎকার ও কান্নার শব্দে তার অন্য সহপাঠীরা ছুটে এসে দরজা ধাক্কা দিয়ে খোলেন। এসময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে তড়িঘড়ি করে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দিতে দেখেন তার সহপাঠীরা।


আরও জানা যায়, শিক্ষকের এমন কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীরা দেখে ফেলায় তাদেরকে আবেগাপ্লুত করে কাউকে না জানানোর অনুরোধ করেন অভিযুক্ত ওই শিক্ষক। শিক্ষার্থী বাড়িতে গিয়ে তার মাকে জানালে, সামাজিক অবস্থান ও সম্মানহানির ভয়ে চুপ থাকেন সকলে। ঘটনার তিনদিন পর ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারেন। এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দিতে ও ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে অভিযুক্ত শিক্ষক স্থানীয় পর্যায়ে তদবির চালান। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে অভিযুক্ত করে সদর থানায় ধর্ষণ চেষ্টা মামলা দায়ের করেন।  এই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে সময় সংবাদে একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়।


ভুক্তভোগী পরিবারের এক সদস্য সময় সংবাদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ঘটনা ১৫ অক্টোবর ঘটেছে, কিন্তু আমরা জেনেছি ১৮ তারিখ। স্কুলে আমাদের ছোটো বাচ্চাকে ভয়-ভীতি দেখানোর পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। সবকিছু উপেক্ষা করে সামাজিক সম্মানহানিকে তুচ্ছ করে  থানায় গিয়েছিলাম ন্যায় বিচার পাবার আশায়।


মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) মো. মাসুদ রানা বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক তরিকুলকে আমরা এখনো গ্রেফতার করতে পারিনি। তবে তাকে ধরতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন