নদীর বুকে শত বছরের ঐতিহ্য, বৈঠাকাটা বাজারে নৌকাতেই চলে বেচাকেনা

৩ সপ্তাহ আগে ১০
শতশত নৌকা আর ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় দেখলে মনে হবে নদীর বুকে ছোট একটি গ্রাম। তবে এটি পিরোজপুরের বৈঠাকাটা ভাসমান বাজার। এ বাজারে বেচাকেনা সবই চলে নৌকায়। শত বছরের এ ভাসমান বাজারকে অ্যাগ্রো ইকো ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা প্রশাসনের।

পিরোজপুরের নাজিরপুরের বৈঠাকাটার ভাসমান বাজার। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই ভাসমান বাজারে ভোরের আলো ফোটার আগেই সারি সারি নৌকার দৃশ্য নজর কাড়বে যে কারোও। দেখে মনে হতে পারে এটি থাইল্যান্ড কিংবা ভিয়েতনামের কোনো ভাসমান মার্কেট।

 

স্থানীয়রা উৎপাদিত বিভিন্ন ফসল ও সবজি তুলে নৌকায় করে নিয়ে আসেন বেলুয়া নদীর বৈঠাকাটার ভাসমান বাজারে। ভৌগোলিক কারণে এখানকার সার্বজনীন বাহন হচ্ছে নৌকা। আশপাশের মানুষ তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করতে বাজারে আসেন নৌকায় করে।

 

ক্রেতারাও কিনতে আসেন নৌকা নিয়েই। সময় আর অর্থ বাঁচাতে পণ্য ডাঙায় তোলা হয় না। তাই নৌকাতেই চলে বেচা-কেনা। স্থানীয়দের পাশাপাশি পাইকারি ক্রেতারাও এখান থেকে পণ্য কিনে নদীপথেই নিয়ে যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

 

স্থানীয় সবজি চাষি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘এ বাজারটি শত বছরের পুরোনো। আমাদের পূর্বপুরুষদের সময় থেকেই সবাই এখানে তাদের উৎপাদিত তরকারি ও ফলমূল বিক্রি করতে আনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে শাকসবজি ও ফলমূল কিনতে আসে। তুলনামূলকভাবে দাম কম হওয়ায় এবং ভালো মানের পণ্য পাওয়া যায় বলেই ক্রেতারা এই বাজারে আসেন।’

 

আরও পড়ুন: আসছে খেজুরের রস-গুড় সংগ্রহের মৌসুম, ভাঁড় তৈরিতে ব্যস্ত দেহাটি গ্রামের মৃৎশিল্পীরা

 

তবে এই বাজারে শুধু সবজি বা চারা নয়, বেচাকেনা চলে বিভিন্ন শস্য সামগ্রীরও। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শস্য সামগ্রী নিয়ে সপ্তাহে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার চাষিরা ছোট ছোট নৌকা করে এই ভাসমান হাটে আসেন। এরপর পাইকারি ক্রেতারা এগুলো কিনে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সবজির দাম তুলনামূলকভাবে সস্তা হওয়ায় ক্রেতাদের ভিড়ে এই হাট সর্বদা সরব থাকে।

 

পার্শ্ববর্তী জেলা বাগেরহাট থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী খলিল হাওলাদার বলেন, ‘আমরা বৈঠাকাটা বাজার থেকে শাক-সবজি, ফলমূলসহ বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে গ্রামে খুচরা বিক্রি করি। বিশেষ করে শীতের শুরুতে বৈঠাকাটার সবজির চারা বেশ জনপ্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই বাজারে আসছি। তবে তুলনামূলকভাবে বাজারের কোনো উন্নয়ন হয়নি। ব্যবসায়ীদের জন্য শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই এবং ভালো মানের কোনো হোটেলও নেই।’

 

এদিকে, ভাসমান এই বাজারটিকে অ্যাগ্রো ইকো ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষণার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল হাসান জানান, ‘কৃষিপণ্য ছাড়াও এ ভাসমান বাজার দিন দিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বেলুয়া নদীর এই ভাসমান বাজারকে অ্যাগ্রো ইকো ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষণা করা যায় কিনা তা নিয়ে জেলা কৃষি বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চলছে।’

 

ভাসমান এই বাজারকে কেন্দ্র করে বৈঠাকাটায় গড়ে উঠেছে প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ একটি বাজার। আর প্রতি হাটে এখানে প্রায় বিক্রি হয় কোটি টাকার কৃষি পণ্য।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন