যুদ্ধবন্দিদের চিকিৎসার জন্য ইউক্রেনের সদর দফতরের কর্মকর্তা পেট্রো ইয়াতসেনকো বলেন, রাশিয়ার বাহিনী সম্মুখ লাইনে ( ফ্রন্ট লাইনে) উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি শুরু করার পর থেকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোর সাথে বন্দিবিনিময় নিয়ে আলোচনা একটু কঠিন হয়ে পড়েছে।
চলতি বছর মাত্র ১০ জন বন্দি বিনিময় হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এটিই সর্বনিম্ন সংখ্যা।
আরও পড়ুন:বড়দিনে ইউক্রেনে বড় ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল রাশিয়া
যদিও ইউক্রেন রাশিয়ার হাতে বন্দি থাকার প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশ করেনি, তবে এই সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
রাশিয়া এই বছর যুদ্ধক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এতে রাশিয়ার হাতে ইউক্রেনীয়দের বন্দি হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে বলে আশংকা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ বন্দিবিনিময়ে বাড়িতে ফেরা একজন হলেন ইউক্রেনীয় নাবিক আন্দ্রি তুরাস। ইউক্রেনীয় শহর লভিভের একটি ফ্ল্যাটে, অ্যান্ড্রি ও তার স্ত্রী লেনা বিবিসিকে তাদের অগ্নিপরীক্ষার অসাধারণ গল্প বলেন। ২০২২ সালে মারিউপোল শহর রক্ষা করার সময় তাদের দুজনকেই ধরা হয়েছিল।
‘তারা আমাদেরকে বলেছিল যে কীভাবে ইউক্রেনের অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাবে। একজন যুদ্ধ চিকিৎসক লেনা বলেন, ‘রাশিয়ার অপহরণকারীরা আমাদের মাথা থেকে ইউক্রেনীয় পরিচয় নির্মূল করার চেষ্টা করেছিল।’
দুই সপ্তাহ বন্দি থাকার পর অবশ্য লেনাকে মুক্তি দেয়া হয়। কিন্তু সে সময় তিনি যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তাতে তার মনস্তাত্ত্বিক ট্রমা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত চিৎকার শুনেছি, আমরা জানতাম (আমাদের ইউনিটে) পুরুষদের নির্যাতন করা হচ্ছে।’
‘তারা আমাদের নির্দয়ভাবে মারধর করত। মুষ্টি, লাঠি, হাতুড়ি- যা সামনে পেত তা দিয়েই তারা মারত। অ্যান্ড্রি আরও বলেন, ঠান্ডায় আমাদের উলঙ্গ করে হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করত। এতে আমাদের পা ছিঁড়ে যেত, আমরা বরফ হয়ে যেতাম।’
‘আমাদের যে খাবার দেয়া হত তা ছিল ভয়ঙ্কর। টক বাঁধাকপি এবং নষ্ট মাছের মাথা। এটি মাঝরাতে একটি খারাপ স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠার মতো ছিল’, বলেন অ্যান্ড্রি।
অ্যান্ড্রির বন্দিত্ব তার স্ত্রীর চেয়ে অনেক বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল - আড়াই বছর।
তিন মাস আগে বন্দি বিনিময়ে যখন তাকে মুক্তি দেয়া হয় তখন প্রথমবারের মতো তার দুই বছরের ছেলে লিওনকে দেখেন অ্যান্ড্রি। যখন তিনি ও তার স্ত্রীকে বন্দি করা হয় তখন লেনা জানতেন না যে তিনি সন্তানসম্ভবা।
এদিকে জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দিদের বিরুদ্ধে ‘ব্যাপক এবং পদ্ধতিগত’ নির্যাতন চালিয়েছে। গুরুতর মারধর, বৈদ্যুতিক শক, যৌন সহিংসতা, শ্বাসরুদ্ধকর, দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস পজিশন, জোরপূর্বক ব্যায়াম, ঘুমের বঞ্চনা, উপহাস, সহিংসতার হুমকি এবং অপমান তার মধ্যে অর্ন্তভুক্ত।
আরও পড়ুন:পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার বিষয়ে ট্রাম্পকে রাশিয়ার কঠোর বার্তা
অন্যদিকে বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে, লন্ডনে রুশ দূতাবাস দাবি করেছে; ‘ আপনারা বন্দিদের নিয়ে যে অভিযোগগুলো করেছেন তা স্পষ্টতই মিথ্যা। আটক ইউক্রেনীয় বন্দিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়। যা রাশিয়ান আইন এবং জেনেভা কনভেনশনের বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের ভালো মানের খাবার দেয়া হয়। ঘুম নিশ্চিত করা হয়। চিকিৎসা সহায়তাসহ ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক সেবাও তাদের সরবরাহ করার দাবি জানায় দূতাবাস।’
]]>