গত ৮ অক্টোবর চার্জশিট আমলে নিয়ে মামলার মূল আসামি কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানসহ দুইজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–২ বগুড়া গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করেন। তবে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও আসামিদের গ্রেফতারে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার। এছাড়া, আদালতের গ্রেফতারি পরওয়ানা জারির এক সপ্তাহ পার হলেও কাউকে গ্রেফতার না করায় পরিবার নতুন করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
তদন্তের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। তিন বছরে ছয়জন তদন্ত কর্মকর্তার বদলের মধ্যে বাদির একের পর এক আপত্তির পরও মূল তদন্তকারী ওসি কৃপা সিন্ধু বালাকে দীর্ঘদিন চার্জশিটের বাইরে রাখার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। জানা গেছে, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার তাকে বাঁচাতে নানা প্রভাব প্রয়োগ করার চেষ্টা চালান। তবে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই কর্মকর্তা বিদেশে চলে যান।
২০২২ সালের প্রথম দিকে ধুনট উপজেলার এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার মোবাইল ফোনে ভিকটিমকে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়, যা মামলার মূল আলামত ছিল।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, মোবাইল ফোনটি তদন্তকারী ওসি কৃপা সিন্ধু ইচ্ছাকৃতভাবে গায়েব করেন। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে সিআইডি, র্যাবসহ একাধিক সংস্থায় ডিজিটাল ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও তাদের প্রতিবেদন প্রভাবিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠে।
২০২৪ সালের ২৪ মার্চ আদালতে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্ত সংস্থা, তবে চার্জশিটে ওসি কৃপা সিন্ধু বাদ ছিলেন। বাদির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় তদন্তের আবেদন করা হয়।
আরও পড়ুন: বগুড়ায় সভাস্থল লক্ষ্য করে ককটেল হামলা, যা বললেন সারজিস
গত ৩ জানুয়ারি সময় সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ফাঁস হয় নিয়মবহির্ভূতভাবে আলামত অন্যত্র পাঠানোর স্বীকারোক্তিমূলক কলরেকর্ড। এতে সরাসরি ওসি কৃপা সিন্ধুর সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে। বিষয়টি প্রকাশের পর নতুন করে তদন্ত শুরু করে পিবিআই।
পিবিআইয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সময় সংবাদকে বলেন, ‘মামলার আলামত নষ্টে ওসি কৃপা সিন্ধু বালার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিতভাবে পাওয়া গেছে। সেই কারণে সম্পূরক চার্জশিটে তাকে আসামি করা হয়েছে।’
ভুক্তভোগীর বাবা-মা ও আইনজীবীরা জানান, তিন বছর ধরে অপমান ও অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা। তাদের দাবি, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাসহ সব আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার সম্পন্ন করতে হবে। তারা বলেন, ‘আমাদের মেয়ে ন্যায়বিচার পাবে এই বিশ্বাস নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ওসি কৃপা সিন্ধুর মতো প্রভাবশালী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হওয়া আমাদের আশার আলো।’
পিবিআই বগুড়ার পুলিশ সুপার একেএম মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের চেষ্টা করেছি। বিলম্ব হলেও সত্য প্রকাশ পেয়েছে।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর পাবলিক প্রসিকিউটর মোজাম্মেল হক বলেন, ‘চার্জশিট দাখিলে সময় লেগেছে, তবে এখন আশা করা যায় মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে।’
]]>
৪ সপ্তাহ আগে
৫







Bengali (BD) ·
English (US) ·